সোমবার , ২৫শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১০ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ২রা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

ফুলে ফুলে সেজেছে বিরুলিয়ার গোলাপ গ্রাম, বাড়তি লাভের আশায় চাষীরা

প্রকাশিত হয়েছে- শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আব্দুল্লাহ আল নোমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, সাভার (ঢাকা):  গোলাপ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন সাভারের বিরুলিয়ার কয়েকটি গ্রামের ফুলচাষীরা। ফুলের জোগান দিতে সাভারের গোলাপ চাষীরা ক্লান্তহীন কাজ করেন বছর জুড়েই। করোনার প্রভাবে গেল কয়েক বছর ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এবার বাড়তি লাভের আশা করছেন সাভারের ফুল চাষীরা।

সাভারের বিরুলিয়ার বিভিন্ন গ্রামের বুক জুড়ে ফুটে রয়েছে টকটকে লাল গোলাপ। সাদুল্লাপুর, শ্যামপুর, কমলাপুর, বাগ্মীবাড়ি, মোস্তাপাড়া গ্রামগুলোতে গোলাপ চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন ফুলচাষীরা। ব্যাপক বানিজ্যিক চাষাবাদের কারনে এই অঞ্চল পরিচিতি পেয়েছে গোলাপগ্রাম নামে। বিস্তীর্ণ গোলাপের বাগানে ফুটে থাকা গোলাপের চোখ জুড়ানো দৃশ্য নিয়ে সেজে আছে গ্রামগুলো। গোলাপের সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই দেশের নানা প্রান্ত থেকে পরিবার নিয়ে এখানে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। ছুটির দিনগুলোতে দর্শনার্থীদের ভীর বেড়ে যায় কয়েকগুন। ফুলের টোপর পড়ে বাগানে ঘুড়ে বেড়ানোর আনন্দঘন মুহুর্তগুলো ক্যামারাবন্দী করছেন তারা।

গোলাপ গ্রামে ঢোকার মুখেই রয়েছে বেশ কিছু ফুলের দোকান। এছাড়া প্রায় প্রতিটি বাগানের পাশেই রয়েছে ফুল বিক্রির ব্যবস্থা। চাইলে বাগান থেকে পছন্দ করে ফুল কেনা যায়। আকার ও ধরনভেদে প্রতিটি ফুল বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০টাকায়।

বছর জুড়ে ফুল বিক্রি হলেও ডিসেম্বর থেকে মার্চ সময়কে ধরা ফুল বিক্রির প্রধান মৌসুম। ১৬ ডিসেম্বর, পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস, শহীদ দিবস ও স্বাধীনতা দিবস ঘিরে এ সময়ে ফুল বিক্রী হয় সবচেয়ে বেশি।

চলতি মৌসুমে কোন রোগ বালাই না থাকায় বাগানগুলো ভরে ওঠেছে টকটকে লাল গোলাপে। ফুল ব্যবসায়ী শিহাব বলেন, গত বছর অজানা রোগে বাগানের ফুল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন তারা। তবে এবার এখন পর্যন্ত কোন রোগ বালাই নাই। বাগানের গাছ ও ফুল ভালো আছে। কোন দূর্যোগ না আসলে এবার ক্ষতি পূষিয়ে নেয়া যাবে।

ফুল চাষী আব্দুল খালেক বলেন, করোনার সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন বন্ধ থাকায় গেল তিন বছর অনেক কষ্টে টিকে রয়েছেন তারা। তবে এবছর তারা লাভের আশা করছেন। ইতোমধ্যে ১৬ ডিসেম্বরে ভালো বেচা-কেনা হয়েছে। সামনে আরও কয়েকটি দিবস রয়েছে। বাগানেও ভালো ফুল রয়েছে।

এদিকে, বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের অসচেতনতায় বাগানের ফুল নষ্ট হওয়ার আক্ষেপ রয়েছে ফুল চাষীদের মধ্যে। ফুল চাষী ফকির চাঁদ বলেন, দর্শনার্থীদের জন্য আমরা আলাদা কিছু বাগান রেখেছি। কিছু বাগানে ফুলের নতুন কুড়ি এসেছে সেগুলোতে বেড়া দেওয়ার পরও দর্শনার্থীরা ইচ্ছেমতো বাগানে ঢুকে গাছ নষ্ট করে ফেলে। কিছু মানুষ বুঝতে চায় না এতে আমাদের কতটা ক্ষতি হয়। একটা কুড়ি নষ্ট হলে ক্ষতি হয় ৫ থেকে ১০ টাকা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয়সূত্রে জানা যায়, সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের প্রায় ১৫শ’ কৃষক ৩শ’ হেক্টর জমিতে সারা বছরজুড়েই বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল চাষ করে। এবছর ২৮০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়েছে। ফুল চাষীদের জন্য প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষন ও কারিগরী সহযোগীতার ব্যবস্থা রয়েছে।

সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, করোনার কারণে বিরুলিয়ার ফুল চাষিরা যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন সামনের তিনটি দিবসে চাষিরা যাতে ফুলের ন্যায্যমূল্য পান সেই বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে চাষিরা যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেই লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি অফিস তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে এবং বিগত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে এবার সাভারের ফুল চাষিরা প্রায় ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।