ভারতের গুজরাট রাজ্যের বস্তি এলাকা থেকে ধরে এনে সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী মান্দারবাড়িয়া চরে ফেলে যাওয়া ৭৮ জনের মধ্যে ৭৫ জন জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিককে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে স্থানীয় প্রশাসন। আর জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক দাবি করায় বাকি তিনজনকে শ্যামনগর থানায় মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ মে) বেলা পৌনে ১১টার দিকে শ্যামনগর থানা চত্বরে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এই তথ্য জানায়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, কালিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিথুন সরকার, শ্যামনগর থানার ওসি হুমায়ুন কবির মোল্লা প্রমুখ।
আবরার হাসান বলেন, গত ৯ মে ভোররাতে ভারতীয় বিএসএফ ও নৌবাহিনী যৌথভাবে গোপনে ৭৫ বাংলাদেশি ও ৩ ভারতীয় মুসলিম নাগরিককে সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ফেলে রেখে যায়। পরে তারা আশ্রয় নেয় মান্দারবাড়ি ফরেস্ট অফিসে। বিষয়টি জানার পর ১০ মে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন দ্রুত অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে প্রাথমিক খাবার ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করে।
জিজ্ঞাসাবাদে উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা জানায়, ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদ ও সুরাট এলাকার বিভিন্ন বস্তিতে তারা শ্রমজীবী হিসেবে বসবাস করতেন। গত ২৬ এপ্রিল রাতে ভারতীয় পুলিশ তাদের ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় এবং পরিবারের সামনে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। পরে চোখ বেঁধে সামরিক বিমানে চড়ে তাদের আলাদা জায়গায় স্থানান্তর করা হয়। এরপর জাহাজে করে বাংলাদেশের জলসীমায় এনে নামিয়ে দেওয়া হয়।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রনী খাতুন বলেন, গত ১১ মে রাতে কোস্টগার্ডের কাছ থেকে উদ্ধারকৃতদের গ্রহণ করে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ। সোমবার কাগজপত্র প্রস্তুত না হওয়ায় হস্তান্তর সম্ভব হয়নি। পরে মঙ্গলবার ৭৫ বাংলাদেশিকে আত্মীয়দের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, ভারতীয় নাগরিক দাবি করা তিনজন হলেন খুলনার বটিয়াঘাটা থানার ফুলবাড়িয়া গ্রামের খালিদ শেখের ছেলে আব্দুর রহমান (২০), নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বিষ্ণুপুর গ্রামের মৃত মুন্না সাহার ছেলে মো. হাসান শাহ (২৪) ও একই গ্রামের সোহেল শেখের ছেলে সাইফুল শেখ (১৯)। তাদের কাছে কোনো বৈধ ভারতীয় কাগজপত্র না থাকলেও তারা জন্মসূত্রে গুজরাটের নেহেরীনগর এলাকার বাসিন্দা বলে দাবি করেছেন। তাদের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
উল্লেখ্য, উদ্ধারকৃত ৭৮ জনের মধ্যে নড়াইল জেলার ৬৭ জন, খুলনার ৬ জন, যশোরের ২ জন এবং সাতক্ষীরা, ঢাকা ও বরিশালের একজন করে রয়েছেন।