পারমাণবিক বোমার মালিক হওয়া থেকে ইরান ‘আর বেশি দূরে নয়’ বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন পরমাণু শক্তির ব্যবহার পর্যবেক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ)। আএইএ’র শীর্ষ নির্বাহী রাফায়েল গ্রোসি এ সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
সম্প্রতি ফ্রান্সের দৈনিক লা মঁদ পত্রিকাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন গ্রোসি। বুধবার তা প্রকাশিত হয়েছে সেখানে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “এটা একটা ধাঁধার (পাজল) মতো। ব্যাপারটা এমন যে আপনার সামনে কিছু টুকরো দেওয়া হলো এবং সেগুলোর একটির সঙ্গে আরেকটিকে যুক্ত করে আপনি একটি কাঠামো বানালেন।”
“ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এখনও এতদূর যায়নি, তবে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হওয়া থেকে ইরান আর বেশি দূরে নেই। এটা আমাদের স্বীকার করতে হবে।”
“মানে আমি বলতে চাইছি, ইরান যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কখনও বলে যে ‘আমাদের কোনো পরমাণু অস্ত্র নেই’ তাহলে তা শোনার পরেই বিশ্বাস করার কোনো প্রয়োজন নেই। বরং এই দাবি সত্য কি না— তা যাচাই করা জরুরি।”
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগশির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বুধবার তেহরানে গিয়েছিলেন রাফায়েল গ্রোসি। ইরানের পরমাণু কর্মসূচির প্রধান মোহাম্মদ এসলামির সঙ্গেও সাক্ষাতের ইচ্ছে ছিল তার।
গ্রোসি জানান, এসলামির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি তার তবে আরাগশির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে এবং বৈঠকটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, সে সম্পর্কে অবশ্য সাক্ষাৎকারে কিছু বলেননি গ্রোসি। তবে পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় ইরানকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে যে তাদের পরমাণু কর্মসূচির উদ্দেশ্য শান্তিপূর্ন। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পদায়কে এ দাবি বিশ্বাস করাতে হলে কূটনীতি এবং আইএইএ’র সঙ্গে সহযোগিতা অপরিহার্য।”
এর আগে গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে আইএইএ জানিয়েছিল, ইরান ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত করছে। যদি এই ইউরেনিয়ামের বিশুদ্ধতা ৯০ শতাংশে উন্নীত করা হয়, সেক্ষেত্রে অনায়াসে তা ব্যবহার করে অন্তত ৬টি পরমাণু বোমা বানানো সম্ভব।
গত দুই দশক ধরে পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে ইরান। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিকে পরমাণু অস্ত্র থেকে দূরে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও রাশিয়া ২০১৫ সালে জ্যাকোপা নামে একটি চুক্তি করেছিল। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৭ সালে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রেকে সরিয়ে নিয়ে আসায় ভেঙে যায় জ্যাকোপা।
২০২৪ সালের নির্বাচনে জিতে ফের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ট্রাম্প। গত মাসে পরমাণু কর্মসূচি ইস্যুতে সরাসরি আলোচনার আগ্রহ জানিয়ে ইরানের সরকারকে চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি। সেই অনুযায়ী সম্প্রতি রোম এবং ওমানের রাজধানী মাস্কাটে আলোচনায় বসেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের সরকারি প্রতিনিধিরা। তবে সেই আলোচনার ফলাফল কী— তা এখনও প্রকাশ করেনি ওয়াশিংটন বা তেহরান।