1. numanashulianews@gmail.com : kazi sarmin islam : kazi sarmin islam
  2. islamkazisarmin@gmail.com : newstv : Md newstv
  3. admin@newstvbangla.com : newstvbangla : Md Didar
নারায়ণগঞ্জে গর্জে ওঠা জুলাই-আগস্ট, এক রক্তাক্ত অধ্যায় - NEWSTVBANGLA
রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:৩২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
ঢাকায় রাতে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে জুলাই বিপ্লব নতুনভাবে দেশ গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে দেশের ইতিহাস লেখা যাবে না : চসিক মেয়র ‘হঠাৎ বিকট শব্দ, দৌড়ে গিয়ে দেখি বাড়ির ভেতরে আগুন আর কান্নাকাটি’ পরিবেশ দূষণমুক্ত চাইলে দূষণকারী শিল্পকারখানা বন্ধ করার আহ্বান না ফেরার দেশে নয়া দিগন্তের সাবেক সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন মাহিন সরকারের বিরুদ্ধে ৭.৫ কোটি টাকার ভুয়া গল্প, আসলেই কি ঘটেছে বেলকুচিতে রাতের মধ্যে যেসব এলাকায় ঝড় হতে পারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা হত্যা মামায় জাবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ললিপপ জনি কেরানীগঞ্জে এসি বিস্ফোরণ, একই পরিবারের ৪ জন হাসপাতালে

নারায়ণগঞ্জে গর্জে ওঠা জুলাই-আগস্ট, এক রক্তাক্ত অধ্যায়

প্রতিনিধি

২০২৪ এর জুলাই- আগস্ট নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে এক গভীর ক্ষতচিহ্ন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢেউ রাজধানী ঢাকা ছাড়িয়ে নারায়ণগঞ্জে এসে আছড়ে পড়ে এক অভূতপূর্ব শক্তি ও আবেগ নিয়ে। ঢাকার পাশের এই গুরুত্বপূর্ণ জেলাটি হয়ে ওঠে দেশের আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে রাজপথে নামে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা, শ্রমজীবী মানুষ এবং সাধারণ নাগরিক। দাবি ছিল সাম্য, ন্যায়ের—কিন্তু জবাবে তারা পেয়েছে গুলি, গ্রেনেড আর মৃত্যু।

১৭ জুলাই : শান্তিপূর্ণ শুরু

নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনের শুরু হয় ১৭ জুলাই। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জ অংশে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তা বন্ধ করে নিজেদের দাবি জানান। যেন একটি শান্ত নদীর মতো আন্দোলনে আবেগ ছিল, ছিল বিভিন্ন সংগঠনের উপস্থিতি কিন্তু ছিল না কোনো সহিংসতা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ঘোষিত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জে শিক্ষার্থীরা সেদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। মুহূর্তেই বন্ধ হয়ে যায় রাজধানীর সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের ১৫ জেলার যোগাযোগ। তবে শান্তিপূর্ণ সেই কর্মসূচি সহিংসতায় রূপ নেয় যখন চাষাড়ায় ছাত্রদের মিছিলে পুলিশের ভ্যানে ভাঙচুর হয়। ঠিক তখনই অশান্তির সূচনা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নামে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের ক্যাডাররা। তারা আগ্নেয়াস্ত্র, রড ও চাপাতি নিয়ে তেড়ে আসে। শহরের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে বারুদের গন্ধে। শতাধিক ছাত্র, পুলিশ, সাংবাদিক আহত হন।

১৯ জুলাই : রাজপথ রণক্ষেত্র

শুক্রবার সকালেই সাইনবোর্ড থেকে মেঘনা, লিংক রোড থেকে সোনারগাঁও—সর্বত্র আন্দোলনকারীদের দখলে। পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ চলে। ফতুল্লা স্টেডিয়াম এলাকায় আগুন জ্বলে নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল পার্কে। শামীম ওসমান গাড়িবহর নিয়ে মহড়া দেন, তার অনুসারীরা অস্ত্র হাতে শহরে নেমে আসেন।

শামীম ওসমান ও তার ক্যাডার বাহিনী
সেদিন বিকেলে ঘটে একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা—ছোট্ট শিশু রিয়া গোপ বাবার কোলে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়। আর একটি মিছিলের পেছনে ছররা গুলির আঘাতে লুটিয়ে পড়ে বেশ কয়েকজন। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে শহরময়। বিকেলে আন্দোলনকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়, পুলিশ বক্স, এবং পিবিআই কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। হেলিকপ্টার টহলের মাঝে নারায়ণগঞ্জ যেন এক যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নেয়।

২০ জুলাই : রক্তস্নাত শনিবার

হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া হয় সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস। আন্দোলনকারীরা গলিতে গলিতে ছড়িয়ে পড়ে। বিকেলে শিমরাইলের হাজী ইব্রাহিম কমপ্লেক্সে অবস্থিত শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্প থেকে গুলি ছুড়লে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে লুটিয়ে পড়ে এক ছাত্র। মূহুর্তে সেই কমপ্লেক্সের নিচ তলায় আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা—যেখানে ছিল ব্যাংক, হাসপাতাল ও পুলিশের ক্যাম্প। আগুনে পুড়ে মারা যান ব্যাংকের ভেতরে সাজসজ্জায় কর্মরত তিন শ্রমিক, হতাহত হন শতাধিক মানুষ। যৌথ বাহিনীর হেলিকপ্টারে উদ্ধার করা হয় পুলিশ সদস্যদের। এদিনই প্রাণ হারায় গৃহবধূ সুমাইয়া আক্তার, বারান্দায় দাঁড়িয়ে হেলিকপ্টার দেখতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। মারা যান ১০ বছরের শিশু হোসাইন, যিনি বাবাকে খুঁজতে গিয়েছিলেন। শহীদ হন গজারিয়া পলিটেকনিকের ছাত্র মেহেদী হাসানসহ মোট ২২ জন।

২১-২২ জুলাই: কারফিউ ও নিস্তব্ধতা

সেনাবাহিনীর টহল, শহরের আকাশে হেলিকপ্টার, মহাসড়কে থেমে যাওয়া সবকিছু। আন্দোলন ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়। কিন্তু শুরু হয় আরেক দুঃস্বপ্ন—ধরে নিয়ে যাওয়া হয় শত শত মানুষকে। মামলা হয় ৩০টির বেশি, গ্রেপ্তার করা হয় ৬০০ জনের বেশি মানুষকে, যাদের অনেকেই কিশোর ও নিরপরাধ।

নিরপরাধ নাতির মুক্তির জন্য আহাজারি করছে নানী
২৬-২৮ জুলাই : আদালতে কান্না

নারায়ণগঞ্জ আদালত চত্বর হয়ে ওঠে কান্না আর অপেক্ষার মিলনস্থল। স্বজনদের মুক্তির আকুতি, আইনজীবীদের ক্ষোভ, মামলার অনুলিপি না পাওয়ার অভিযোগ—সব মিলে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি।

৩ আগস্ট : ফের রাজপথে গণআন্দোলন

১২ দিন পর আবার রাজপথে নামে ছাত্র-জনতা। স্লোগান ওঠে—“শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাই।” চাষাড়া শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক জোট আয়োজন করে ‘দ্রোহের গান ও কবিতা’। বিজিবির গাড়ি শহর ছেড়ে গেলে ছাত্ররা উল্লাসে ফেটে পড়ে। পুলিশের প্রতিশ্রুতি ভেঙে দিয়ে আবারও ছোড়া হয় গুলি রাস্তায় বসে থাকা আন্দোলনকারীদের ওপর।

৪-৫ আগস্ট : উল্লাস, বিদ্রোহ ও গুলি

৪ আগস্ট পুরো জেলা ছাত্র ও শ্রমজীবী মানুষের দখলে। এদিন ডিসি অফিসে হামলা, সংঘর্ষ, রাবার বুলেটে চারজন নিহত হন। পরদিন ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে শহরের বুক চিড়ে রাজধানীমুখী পদযাত্রা। অনেককে সেনাবাহিনী ফিরিয়ে দেয়, অনেকেই নদীপথ বা পুরোনো সড়ক ধরে ঢাকায় পৌঁছান। চাষাড়ায় গুলিতে নিহত হন আবুল হাসান।

তবে সেদিনই শহরে ছড়িয়ে পড়ে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর। উল্লাসে ফেটে পড়ে জনতা। পটকা, মিষ্টি, পতাকা—গণতন্ত্র ফিরে পাবার উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা নারায়ণগঞ্জ।

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, আন্দোলনে মোট ৫৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২১ জন নারায়ণগঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা। জেলাজুড়ে বৈষম্যবিরোধীর ঘটনায় ১০২টি হত্যা এবং হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জেই দায়ের করা হয়েছে ৫৪টি। মামলায় আসামি করা হয় শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং স্থানীয় নেতাদের।

বাম দিক থেকে গুলিতে নিহত রিয়া গোপ, হোসাইন মিয়া, মেহেদী হাসান ও সুমাইয়া আক্তার
আন্দোলনে যাদের মৃত্যু কাঁদিয়েছে দেশবাসীকে

নারায়ণগঞ্জে আন্দোলন চলাকালে কিছু মৃত্যু এখনো কাঁদা দেশবাসীকে। এ আন্দোলনে ছয় বছরের শিশু রিয়া গোপ বাবার কোলে গুলিবিদ্ধ হয়, আড়াই মাসের মেয়েকে রেখে জানালায় দাঁড়িয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সুমাইয়া আক্তার, বাবাকে খুঁজতে গিয়ে গুলিতে প্রাণ হারায় ১০ বছরের হোসাইন মিয়া, তরুণ ছাত্র, আন্দোলনে এসে মাথায় গুলি লেগে শহীদ হন মেহেদী হাসান।

নারায়ণগঞ্জের সেই জুলাই-আগস্ট ইতিহাসে থাকবে আগুন, কান্না ও প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে। এই শহরের রক্তস্নাত রাজপথ সাক্ষ্য দেবে—গণতন্ত্র, ন্যায় ও সমতার জন্য কতটা মূল্য দিতে হয়। তারা আর ফিরবেন না, কিন্তু ইতিহাসে তারা থাকবেন স্মৃতির প্রদীপ হয়ে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2015
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তাহোস্ট