1. numanashulianews@gmail.com : kazi sarmin islam : kazi sarmin islam
  2. islamkazisarmin@gmail.com : newstv : Md newstv
  3. admin@newstvbangla.com : newstvbangla : Md Didar
তাওরাত কিতাব পেয়েছিলেন মুসা (আ.) - NEWSTVBANGLA
বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ০২:৫২ পূর্বাহ্ন

তাওরাত কিতাব পেয়েছিলেন মুসা (আ.)

প্রতিনিধি

পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালা কোরআন নাজিল করেছেন। এই মাসে কোরআন ছাড়াও আরও অন্যান্য আসমানী কিতাব নাজিল হয়েছে। রমজান মাসে অবর্তীণ পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো তাওরাত। এই কিতাবটি নাজিল হয়েছে বনী ইসরাঈলের বিখ্যাত নবী হজরত মুসা আ.-এর ওপরে।

তাওরাত নাজিলের দিন
হজরত ওয়াসিলা ইবনে আসকাআ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—
ইবরাহিম (আ.)-এর সহিফা রমজানের প্রথম রাতে অবতীর্ণ হয়। তাওরাত নাজিল হয় রমজানের ছয় তারিখে, ইনজিল তেরো তারিখে, আর জবুর নাজিল হয় আঠারো তারিখে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস, ১৬৯৮৪)

এই বর্ণনা অনুযায়ী, রমজানের দ্বিতীয় সপ্তাহে, অর্থাৎ ৬ রমজান, হজরত মুসা (আ.)-এর ওপর তাওরাত নাজিল হয়।
হজরত মুসা (আ.) ও তাওরাতের ঐশী বারতা

হজরত মুসা (আ.) ছিলেন বনি ইসরাইল জাতির নবী ও রাসুল। তাঁকে আল্লাহ তায়ালা মিশরের অত্যাচারী ফিরআউনের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সিনাই পর্বতে (তূর পাহাড়ে) ডেকে নিয়ে যান , সেখানে তাঁর ওপর তাওরাত নাজিল করেন।
কোরআনে এসেছে, আর আল্লাহ মুসার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। (সূরা আন-নিসা, ১৬৪)

হাদিস ও তাফসির অনুযায়ী, মুসা (আ.) চল্লিশ দিন রোজা রাখার পর তূর পাহাড়ে গমন করেন। তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সরাসরি কালাম প্রদান করেন , তাওরাত তাঁর ওপর নাজিল করেন।

তাওরাত : আইন ও হিকমতের কিতাব

তাওরাত ছিল শারীয়াত ও বিধি-বিধানের কিতাব। এটি ছিল ইহুদি জাতির জন্য বিশেষ সংবিধান। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই আমি তাওরাত নাজিল করেছি, যাতে রয়েছে হিদায়াত ও নূর। (সূরা মায়েদা,৪৪)

তাওরাতের মূল শিক্ষা ছিল একত্ববাদ, ন্যায়বিচার , ধর্মীয় আইন-কানুন। কিন্তু কালের বিবর্তনে ইহুদিরা এতে পরিবর্তন আনে, যার ফলে তারা বিভ্রান্তির শিকার হয়।

তাওরাত নাজিলের তাৎপর্য

রোজা ও আত্মশুদ্ধির শিক্ষা: তাওরাত নাজিলের আগে হজরত মুসা (আ.) চল্লিশ দিন রোজা রাখেন, যা আত্মশুদ্ধির প্রতীক।
ঐশী বিধান প্রতিষ্ঠা: তাওরাতের মাধ্যমে সমাজে ন্যায়বিচার ও আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠিত হয়।
তাওহিদের আহ্বান: তাওরাত মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদতে আহ্বান করেছিল।
তাওরাত নাজিলের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

হজরত মুসা (আ.)-এর ওপর তাওরাত নাজিলের ঘটনা ইসলামী ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু ধর্মীয় নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক বাস্তবতাও বহন করে। তাওরাত নাজিলের সময়, স্থান, বনি ইসরঈলের অবস্থা সম্পর্কে কোরআন, হাদিস, ও অন্যান্য ঐতিহাসিক সূত্র থেকে বিস্তারিত জানা যায়।

তাওরাত নাজিলের সময় ও স্থান

তাওরাত হজরত মুসা (আ.)-এর ওপর সিনাই পর্বতে (তূর পাহাড়ে) নাজিল হয়েছিল। কোরআনে এসেছে, যখন আমি মুসার জন্য চল্লিশ রাতের ওয়াদা করেছিলাম। (সূরা বাকারা, ৫১)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, মুসা (আ.)-এর ওপর তাওরাত নাজিল হওয়ার আগে তিনি ৪০ দিন তূর পাহাড়ে অবস্থান করেন। ঐতিহাসিকভাবে এটি প্রায় ১৪০০-১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ঘটেছিল বলে ধারণা করা হয়।

বনি ইসরাঈলের অবস্থা ও তাওরাতের প্রয়োজনীয়তা

তাওরাত নাজিলের সময় বনি ইসরঈল এক গভীর সামাজিক ও ধর্মীয় সংকটে ছিল।

ফিরআউনের অত্যাচার : মুসা (আ.) বনি ইসরঈলকে মিশর থেকে মুক্ত করে বের করে আনেন, কিন্তু তারা ছিল শতাব্দী ধরে দাসত্বে অভ্যস্ত।
বিশৃঙ্খল সমাজব্যবস্থা: মিশর থেকে বের হয়ে বনি ইসরাঈল যখন সিনাই মরুভূমিতে পৌঁছায়, তখন তাদের কোনো সুসংগঠিত নিয়ম-কানুন ছিল না।
বহু দেবতার উপাসনার প্রভাব : মিশরে বসবাসের কারণে তাদের মাঝে মূর্তিপূজার প্রবণতা ছিল। এজন্য আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য নতুন বিধান প্রেরণ করেন।
তাওরাতের মূল বিষয়বস্তু

তাওরাত মূলত পাঁচটি খণ্ডে বিভক্ত ছিল, যা পরবর্তীতে ‘তানাখ’ বা ‘ওল্ড টেস্টামেন্ট’ নামে পরিচিত হয়। তাওরাতের প্রধান বিষয়সমূহ—

তাওহিদের শিক্ষা: এক আল্লাহর ইবাদত ও তাঁর প্রতি আনুগত্য।
নৈতিক ও সামাজিক আইন: চুরি, হত্যা, মিথ্যা সাক্ষ্য ইত্যাদির কঠোর নিষেধাজ্ঞা।
ইবাদত ও কোরবানি সংক্রান্ত বিধান: ইহুদিদের উপাসনার নিয়ম ও শুদ্ধতার বিধান।
বিচারব্যবস্থা: দণ্ডবিধি ও বিচারকের দায়িত্ব সম্পর্কে নির্দেশনা।

মুসলমানদের জন্য শিক্ষা: ইসলামে যেমন কোরআন চূড়ান্ত সংবিধান, তাওরাতও তৎকালীন সময়ের জন্য শরীয়তের মূল ভিত্তি ছিল।

তাওরাতের নসখ (বাতিল) ও বিকৃতি

তাওরাত ছিল আল্লাহর দেওয়া কিতাব, তবে পরবর্তী সময়ে ইহুদিরা এতে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। কোরআনে এসেছে, অতএব ধ্বংস তাদের জন্য, যারা নিজেদের হাতে কিতাব লেখে , বলে, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। (সূরা বাকারা, আয়াত : ৭৯)

ইহুদিরা স্বার্থের কারণে অনেক বিধান পরিবর্তন করে। তারা তাওরাতের প্রকৃত বার্তা ভুলিয়ে দেয়। ইসলামের আগমনের পর কোরআন তাওরাতের সকল বিকৃত অংশকে সংশোধন করে চূড়ান্ত বিধান দেয়।

হজরত মুসা (আ.) ও উম্মতে মুহাম্মদীর সম্পর্ক

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি দেখলাম, কিয়ামতের দিন সকল নবী নিজ নিজ উম্মতের সঙ্গে থাকবে, আর আমি দেখলাম, আমার উম্মত সবচেয়ে বেশি। (সহিহ মুসলিম)

হজরত মুসা (আ.)-এর জীবন ও তাঁর কিতাব থেকে মুসলমানদের অনেক শিক্ষা নেওয়ার আছে। যেমন, ন্যায়বিচার, শত্রুর বিরুদ্ধে দৃঢ়তা, ধৈর্য, ও আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল।

৬ রমজান, তাওরাত নাজিলের দিন, ইসলামের দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এটি শুধু এক কিতাবের অবতরণ নয়, বরং একটি জাতির পূনর্জাগরণের দিন। তবে তাওরাতের বিকৃতির কারণে কোরআন চূড়ান্ত বিধান হিসেবে এসেছে। তাই আমাদের উচিত, এই দিনগুলোর শিক্ষা নিয়ে কোরআনের পথে চলা, তাওহিদ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2015
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তাহোস্ট