চুয়াল্লিশ বছর ধরে পরিত্যক্ত থাকা ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালুর দাবিতে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. কামরুজ্জামান। সম্প্রতি, ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করতে এ নোটিশ দেন তিনি।
অ্যাডভোকেট মো. কামরুজ্জামানের বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলায়।
লিগ্যাল নোটিশে যেসব বিষয়গুলো সরকারের পক্ষে থেকে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে বলা হয়েছে তা হলো—ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু করতে কী কী প্রয়োজন? বিমানবন্দরটি চালু না থাকার ফলে এই এলাকার ৪৫ লাখ মানুষ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও উদ্যোক্তাদের ওপর কিরূপ প্রভাব পড়ছে। নেপাল-ভুটান-বাংলাদেশ ক্রসবর্ডার বাণিজ্য-পর্যটনের সম্ভাব্যতা এবং এই এলাকার ভৌগলিক কৌশলগত দিক বিবেচনায় এখানকার মানুষ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিমানবন্দরের সম্ভাব্য ব্যবহার বিষয়ে পতিবেদন প্রস্তুত ও প্রকাশ করা।
অ্যাড. কামরুজ্জামান জানান, অতীতে বিভিন্ন সময় সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এই বিমাবন্দরটি চালুর কথা ফলাও করে প্রচার করলেও প্রকৃতপক্ষে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি, দৃশ্যমান বা বাস্তব কোনো পদক্ষেপও নেয়নি।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমি আইনি লড়াই শুরু করেছি এবং সরকারকে আইনি নোটিশ দিয়েছি। যদি কাজ না হয় তাহলে পিটিশনার হয়ে সুপ্রিম কোর্টে রিট মামলা দায়ের করব।
তিনি আরও বলেন, ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি চালু না করার একটি গোপনীয় কৌশলগত কারণ রয়েছে। সেটি হলো—আমাদের পার্শবর্তী দেশের অদৃশ্য হস্তক্ষেপ। এই কারণে কোনো সরকারই বিমানবন্দরটি চালু করতে পারেনি। ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি ভারতের ‘চিকেননেক’ এর খুবই সন্নিকটে অবস্থিত এবং ভৌগলিক কৌশলগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত। ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি চালু হলে এই এলাকায় ভারতীয় আধিপত্যের অবসান হবে। এই বিমানবন্দরটি বেসামরিক ও সামরিক উভয় কাজে ব্যবহৃত হওয়ার কার্যকারণ রয়েছে। বর্তমানে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের মধ্যে এই এলাকার মানুষের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব ব্যাপকভাবে হুমকির মধ্যে পড়েছে। এই এলাকার মানুষের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য হলেও বিমানবন্দরটি চালু করা একান্ত প্রয়োজন। ১৯৪০ সালে ব্রিটিশরা যখন এই বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠা করে তখন এটি বেসামরিক ও সামরিক উভয় কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল। বর্তমানেও এই বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠা করে তখন এটি বেসামরিক ও সামরিক উভয় কাজে ব্যবহার করার আবশ্যকতা রয়েছে।
অ্যাড. কামরুজ্জামান বলেন, বিমানযাত্রীর অভাবে বিমাবন্দরটি বন্ধ আছে বলে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এই যুক্তি সঠিক নয়। বর্তমানে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে বিমানযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সৈয়দপুর বিমাবন্দরের অধিকাংশ যাত্রী ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের। প্রতিদিন ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় থেকে প্রায় ৯০-১০০ জন যাত্রী বিমানে যাতায়াত করেন। ঠাকুরগাঁও থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দর প্রায় ১০০ কি.মি. দূরে, যেতে প্রায় ৩/৪ ঘণ্টা সময় লাগে, সৈয়দপুর হয়ে বিমানে ঢাকায় যাওয়ার যেই সময়, খরচ ও কষ্ট হয় তাতে রেলওয়েতে যাওয়া অনেক সহজসাধ্য।
তিনি বলেন, বর্তমানে হাজার হাজার ক্ষুদ্রশিল্প উদ্যোগ গড়ে উঠেছে। এই বিমানবন্দরটি ঠাকুরগাঁও সদর, রুহিয়া, শিবগঞ্জ, পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গি, হরিপুর, পঞ্চগড় সদর, দেবীগঞ্জ, বোদা, আটোয়ারী, তেঁতুলিয়া, দিনাজপুর ও নীলফামারীর কিছু এলাকার প্রায় ৪৫ লাখ মানুষের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে। বিমানবন্দরটির অভাবে এই এলাকায় ভারী শিল্প, কল-কারখানা গড়ে উঠছে না, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না, ৪৫ লাখ মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।