সোমবার , ২৫শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১০ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ২রা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

টেলিগ্রাম গ্রুপেও চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়ছে আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত হয়েছে- বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫

শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং তার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর চূড়ান্ত কোনঠাসা অবস্থায় আছে আওয়ামী লীগ। দলটির অধিকাংশ নেতাকর্মী হয় কারাগারে, নয়তো বিদেশে আছেন।

উপরন্তু গত মে মাসে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের দলীয় ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা ও দলীয় নিবন্ধনে স্থগিতাদেশ আসার পর থেকে রাজনীতে দৃশ্যত ‘নেই’ হয়ে গেছে দলটি।

গত ৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর বিমানে চেপে ভারতে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। এখনও সেখানেই আছেন তিনি। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েক জন জ্যেষ্ঠ নেতা, এমপি-মন্ত্রীও ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে বিভিন্ন গ্রুপ তৈরির মাধ্যমে তারা নিজেদের এবং দেশের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

কিন্তু এই টেলিগ্রাম গ্রুপে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে গিয়েও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়ছেন বলে জানা গেছে। দলের একাধিক নেতার বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ ১৮।

ভারত ও বাংলাদেশে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের বেশ কয়েক জন নেতার সঙ্গে কথা বলেছে নিউজ ১৮। নেতারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং দলটির নিবন্ধন স্থগিতের ঘটনায় তারা অবাক হননি; বরং তারা বিস্মিত হয়েছেন দলের এই পরিস্থিতিতেও শীর্ষ নেতাদের একাংশের চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়ায়।

আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, টেলিগ্রামে কোনো অনুষ্ঠান করতে গেলে দলের সাবেক কয়েক জন এমপি এবং মন্ত্রী মোটা অঙ্কের অর্থ চাইছেন। পাশাপাশি উদ্বেগ জানিয়েছেন হরেদরে নিত্যনতুন গজিয়ে উঠতে থাকা টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোর ব্যাপারেও। অভিযোগকারী নেতাদের ভাষ্য, বর্তমানের অন্তর্বর্তী সরকারের সমর্থক বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠী এমনকি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন অবাধে এসব গ্রুপে প্রবেশ করছে এবং এর ফলে গ্রেপ্তার ও রাজনৈতিকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন দেশে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।

গত এক বছর ধরে বেশ কয়েকটি টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। কোনো কোনো গ্রুপে সদস্য সংখ্যা ৩০ হাজারেরও বেশি ছাড়িয়ে গেছে। এসব গ্রুপে প্রতিদিন দীর্ঘ সময় বৈঠক হয়—যেগুলো শুরু হয় রাত ৯টা থেকে; চলে গভীর রাত পর্যন্ত।

নিউজ ১৮-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমনকি যেসব সভা ও বৈঠকে শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকেন, সেগুলোতেও চাঁদাবাজি চলে। দলীয় প্রধানের উপস্থিতিতে কারা কারা বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাবেন— সেই ইস্যুতে অর্থের লেনদেন হয়।

টেলিগ্রাম গ্রুপে চাঁদাবাজির চর্চার জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে দায়ী করেছেন আওয়ামী লীগের অভিযোগকারী নেতারা। তারা বলছেন, টেলিগ্রাম গ্রুপকে নিজের রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম বানিয়ে ফেলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। গ্রুপে তিনি ‘গরম’ বক্তৃতা দিচ্ছেন, ঢাকা ঘেরাওয়ের আহ্বান জানাচ্ছেন; কিন্তু তার কোনো বক্তব্যে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক পরিকল্পনা বা সময়সীমা আসেনি।

তবে দলের অনেকেই মনে করেন, ওবায়দুল কাদেরের এসব কর্মকাণ্ড যতটা না কৌশল, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক হতাশার বহিঃপ্রকাশ।

আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা নিউজ এইটটিনকে বলেন, “ওবায়দুল কাদেরকে দলের কর্মীরা প্রত্যাখ্যান করেছেন। টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে নিজেকে প্রাসঙ্গিক রাখছেন। কিন্তু এগুলো দলের কোনো কাজে আসছে না, বরং আর্থিক প্রতারণার মাধ্যম হয়ে উঠেছে।”

“টেলিগ্রামে হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের সুযোগ করে দেওয়ার বিনিময়ে দলের জ্যেষ্ঠ নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা দলের শীর্ষ নেতৃত্ব জেনে গেছে।”

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বিষয়টি কেবল সজীব ওয়াজেদ জয়, হাসান মাহমুদ, মোহাম্মদ এ আরাফাত, আসাদুজ্জামান খান কামাল কিংবা মহিবুল হাসান নওফেলের মতো নেতাদের জন্যই নয়, বরং এটি দলের প্রধান খোদ শেখ হাসিনার জন্যও উদ্বেগজনক। কারণ ধারণা করা হয়, অনেক গ্রুপে গোয়েন্দা সংস্থার ইউনূসপন্থি লোকজনও অনুপ্রবেশ করে।

শেখ হাসিনা এখন কীভাবে এ সমস্যা মোকাবিলা করতে চান, সেই প্রসঙ্গে নিউজ ১৮ বলছে— আওয়ামী লীগের নেতাদের বলা হয়েছে, হয় রাজপথে নামুন, নয়তো পদত্যাগ করুন।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, শেখ হাসিনা চান, নতুন নেতৃত্ব আসুক; তারা নতুন চিন্তা ও উদ্যোগ নিয়ে রাস্তায় নামুক। নেতাকর্মীরা শুধু কীবোর্ড যোদ্ধা হয়ে থাকুক, তা তিনি চান না।

খবরে বলা হয়, অনেক তথ্য ফাঁস হচ্ছে কিংবা ডার্ক ওয়েবে চলে যাচ্ছে, এমন আশঙ্কা থেকে আওয়ামী লীগের সব টেলিগ্রাম ব্যবহারকারীকে ভিপিএন ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।

দলের আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “এক বছর হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ জনগণের পক্ষে লড়াই করতে চায়। তাই অচিরেই প্রতিটি জেলা ও মহানগরে ‘প্রতিরোধ কমিটি’ দেওয়া হবে।”

সূত্র : নিউজ ১৮