গৃহযুদ্ধ ও ভূমিকম্প বিধ্বস্ত মিয়ানমারে যুদ্ধবিরতি দীর্ঘায়িত করতে মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের প্রধান জেনারেল মেন অং হ্লেইংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। আজ বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে হবে সেই বৈঠক।
২০২২ সালে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ১০ দেশের জোট আসিয়ানের সদস্যরা মিয়ানমারকে এড়িয়ে চলছে। আসিয়ানের বৈঠক বা জোটগত কর্মসূচিগুলোতে সাধারণত মিয়ানমারকে আহ্বান জানানো হয় না। আনোয়ার ইব্রাহিম বর্তমানে আসিয়ানের চেয়ারম্যানের পদে আছেন। বৃহস্পতিবারের বৈঠক সম্পর্কে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সাধারণ মানুষের ভোগান্তিকে বিবেচনায় নিয়ে এ বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহিম।
ব্যাংককের একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রাও থাকবেন। আসিয়ানের চেয়ারম্যান হওয়ার পর থাকসিনকে নিজের ব্যক্তিগত উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহিম।
মিয়ানমারের নাগরিক ও বর্তমানে থাইল্যান্ডে বসবাসরত রাজনীতি বিশ্লেষক সাই কি জিন সোয়ে এ প্রসঙ্গে রয়টার্সকে বলেন, “এমন সম্ভাবনা যথেষ্ট রয়েছে যে মিয়ানমারের সামরিক সরকার এ বৈঠককে ব্যবহার করে আসিয়ানে নিজেদের জায়গা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করবে।”
২০২২ সালে ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন এনএলডি সরকারকে উচ্ছেদ করে মিয়ানমারের জাতীয় ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
অভ্যুত্থানের পর সামরিক শাসন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে মিয়ানমারের শান্তিকামী জনতা। সেই বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেয় সামরিক সরকার। প্রায় ৬ মাস এই পরিস্থিতি চলার পর মিয়ানমারজুড়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে জান্তাবিরোধী বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী। ফলশ্রুতিতে এক রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ শুরু হয় দেশটিতে। সামরিক সরকারের সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেছে চীন, কিন্তু সেসব চেষ্টা সফল হয়নি।
এর মধ্যে গত ২৮ মার্চ ৭ দশমিক ৭ এবং ৬ দশমিক ৭ মাত্রার দু’টি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয় মিয়ানমারে। এতে নিহত হন ৩৬ হাজারেও বেশি মানুষ। বিপর্যস্ত-বিধ্বস্ত মিয়ানমারে উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ২ এপ্রিল ২০ দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে জান্তা। বৃহস্পতিবার যে বৈঠক বসছে, তা সেই যুদ্ধবিরতিকে বর্ধিত করা নিয়েই। আসিয়ান ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চায়, যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও বাড়ুক।
এদিকে মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর জোট ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (নাগ) জানিয়েছে, এ বৈঠক নিয়ে ‘সর্বোচ্চ সতর্ক’ আছে তারা। এক বিবিৃতিতে নাগ জানিয়েছে, “আসিয়ানের যে মূলনীতি, তা গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করেছেন মিন অং হ্লেইং। সামরিক সরকারের সঙ্গে আসিয়ান চেয়ারম্যানের এই বৈঠক একতরফা এবং আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”