সোমবার (২৪ জুন) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ওই আদালত বর্জন করেন তারা। এর আগে রোববার (২৩ জুন) জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহনূর রহমান শাহীন স্বাক্ষরিত এক নোটিশে আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
ওই নোটিশে বলা হয়েছে, ‘গত ৬ জুন তারিখে জয়পুরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাত কার্যদিবস অতিক্রান্ত হওয়ায় এবং রেজুলেশনের শর্ত পূরণ না হওয়ায় বিজ্ঞ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মহোদয় মো. নূর ইসলামের আদালত ২৪ জুন তারিখ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বর্জন করা হইল। আদালত বর্জনকালে সকল আইনজীবীকে ওই আদালতে সশরীরে বিচারকার্যে অংশগ্রহণ না করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’
আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ জুন আইনজীবী সমিতির সদস্য গোলাম মোর্শেদ আল কোরেশী ও তার সহকারী প্রিয়মের বিরুদ্ধে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করা হয়। মামলা বাদী হয়েছেন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বেঞ্চ সহকারী নাঈম হোসাইন। এই মামলায় আদালত থেকে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
এরপর উচ্চ আদালত থেকে ওই আইনজীবী ও তার সহকারী জামিন নিয়েছেন। এ ঘটনায় সমিতির সদস্য কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেলা ও দায়রা জজ মো. নূর ইসলামের সঙ্গে দেখা করেন এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিষ্পত্তি নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু সন্তোষজনক সমাধান হয়নি। এরপর ৬ জুন সমিতির জরুরি সভা ডাকা হয়। সেখানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তবে আলোচনার মূল বিষয় ছিল আইনজীবী গোলাম মোর্শেদ ও তার সহকারী প্রিয়মের নামে দায়ের করা মামলা নিয়ে। সাতদিনের মধ্যে ওই মামলা প্রত্যাহার ও বেঞ্চ সহকারীকে বদলী করা নিয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয়। সাতদিনের মধ্যে এটি করা না হলে জেলা ও দায়রা জজ আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কয়েকজন আইনজীবী জানান, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের ব্রেঞ্চ সহকারী নাঈম হোসাইন জেলা ও দায়রা জজের আত্নীয় হন। এ কারণে কাউকে তোয়াক্কা করেন না। তিনি প্রকাশ্যে ঘুষ দাবি করেন। গত ৩ জুন আইনজীবী গোলাম মোর্শেদ আল কোরেশী ও তার মোহরার প্রিয়মের বিরুদ্ধে অসত্য ও বানোয়াট গল্প সাজিয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। আইনজীবী ও তার মোহরার বিরুদ্ধে অসত্য ও বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু জেলা ও দায়রা জজ আইনজীবীদের দাবি অগ্রাহ্য করেছেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহনূর রহমান শাহীন বলেন, আইনজীবী ও তার সহকারীর বিরুদ্ধে অসত্য মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়নি। মিথ্যা মামলার বাদী বেঞ্চ সহকারী নাঈম হোসাইনকে বদলিও করা হয়নি। আমাদের বেঁধে দেওয়া সময়ে বিষয়টি সমাধান করা হয়নি। এ কারণে আজ (সোমবার) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. নূর ইসলামের আদালত বর্জন করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালত মো. নূর ইসলামের এজলাসে গিয়ে দেখা গেছে, ব্রেঞ্চ সহকারীসহ অন্যরা দাপ্তরিক কাজ করছিলেন। এজলাসে আইনজীবীদের কাউকে দেখা যায়নি। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অন্য বিচারকদের এজলাসে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছিল।
এ সময় জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী এসএম শাহীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদালত স্বাভাবিকভাবেই চলেছে। ১৮টি মামলা শুনানির জন্য উপস্থাপন হয়। একটি মামলার সাক্ষী হয়, একটির চার্জ গঠন হয়। আটটি মামলার সময়ের দরখাস্ত মঞ্জুর হয়। অন্য মামলার শুনানির জন্য দিন ধার্য হয়। ৪৫ মিনিট এজলাস চলেছে। এ সময় শুধু রাষ্ট্রপক্ষের একজন আইনজীবী বদরুল ইসলাম হোদা ছিলেন। অন্য আইনজীবীরা কেউ এজলাসে আসেননি।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বদরুল ইসলাম হোদা (এপিপ) বলেন, জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ আদালত বর্জন চলছে। আমি রাষ্ট্রপক্ষের হওয়ায় এজলাসে যেতে হয়েছে।