ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক আব্দুল হালিম প্রামাণিককে দেয়া সাজা বাতিল করে নতুন রিভিউ তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের রিভিউ তদন্ত কমিটির কথা জানালেও এখনো দাফতরিক চিঠি বা অনুমতি কিংবা নির্দেশনা কোনটাই পাঠানো হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রহসন মনে করছেন অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার রিভিউ তদন্ত কমিটির প্রধান জবির একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমের অধ্যাপক ড. শওকত জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত শিক্ষক আব্দুল হালিমের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে এ কথা বলেন তিনি।
যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৭ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৭তম সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক আব্দুল হালিমকে ‘তিরস্কার ও দুই বছরের পদোন্নতি বিলম্ব’ সাজা দেওয়া হয়েছিল।
অধ্যাপক শওকত জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের বলেন, আমরা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি যে, নিজ বিভাগের নারী শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অভিযুক্ত লঘু সাজা প্রাপ্ত একজন শিক্ষকের সাজা স্থগিত করে পুনরায় রিভিউ তদন্ত কমিটিতে তদন্ত করার দায়িত্ব আমাদের দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দাফতরিক কোন নোটিশ বা চিঠি দিয়ে আমাদের কোন নির্দেশনা জানানো হয়নি। তাই তদন্তের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়াও সম্ভব হচ্ছে না।
তদন্ত কমিটির অন্যান্য দুই সদস্য হলেন লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দীন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ফরিদা আক্তার খানম।
বিতর্ক এড়াতে রিভিউ তদন্ত কমিটিতে বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষের একজন করে অধ্যাপক তদন্ত কমিটিতে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
গত ৩০ এপ্রিল উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান তার সভকক্ষে নাট্যকলার ঐ শিক্ষকের সাজা স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়ে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে জবি রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বলেন, আমরা এখনো কোনো চিঠি ইস্যু করতে পারিনি। কারণ অভিযুক্ত শিক্ষক আব্দুল হালিম প্রামানিক এখনও কোনো প্রতিনিধি দেননি। আমরা এক পক্ষের প্রতিনিধি পেয়েছি। ঐ শিক্ষক তার প্রতিনিধি দিলেই আমরা তদন্তকারীদের কাছে নির্দেশনা পাঠাতে পারবো।
তবে কতদিনের মধ্যে আব্দুল হালিমকে প্রতিনিধি দিতে বলা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাকে কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। খুব তাড়াতাড়ি তাকে তার পক্ষের প্রতিনিধি দিতে বলা হয়েছে।
তিনি যতদিন প্রতিনিধি দেবেন না ততদিন তদন্ত বন্ধ থাকবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি এসব জানি না। এটা উপাচার্য জানেন।
তবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান দেশের বাইরে থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, উপাচার্যের সংবাদ সম্মেলনের ঠিক পাঁচদিন পরে গত ৪মে অভিযোগকারী নারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে জবির মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শামীমা বেগমকে প্রতিনিধি হিসেবে রাখার নিদ্ধান্ত হয়।
একই সাথে নতুন করে আরো ৫ জন অভিযোগকারীদের সাথে সম্মতি জানিয়ে শিক্ষক হালিমের অতীতের এরূপ নানাবিধ কর্মকাণ্ড ও ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থীর খোলাচিঠি সংযুক্তিসহ দাখিল করা হয়।
উপাচার্য সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, আব্দুল হালিম প্রামানিকের বিরুদ্ধে আরো কয়েকটি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আছে। ফলে সব দিক বিবেচনা করে অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে পুনরায় রিভিউ তদন্ত কমিটি করা হচ্ছে। তবে তখনও তিনি কত দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে হবে এমন কোনো সময় জানাতে পারেননি।
এদিকে অভিযোগকারী নারী শিক্ষার্থীরা বলেন, আমার আব্দুল হালিমের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থান নিয়ে বেশ শঙ্কিত। যৌন নিপীড়নের এমন গুরুতর অপরাধ প্রমাণ হওয়ার পরও তাকে কেবল মাত্র ‘তিরস্কার’ নামক লঘু শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। আবার এমন সাজার বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কঠোর অবস্থানের ফলে ফের তদন্ত কমিটি দিলেও তার কোনো অগ্রগতি নেই। যা আমাদের কাছে বিচারের নামে প্রহসন ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।
অভিযুক্ত শিক্ষক আব্দুল হালিম প্রামানিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখনো কোন প্রতিনিধি দেই নাই, তবে দিবো।
কবে নাগাদ দেবেন জানতে চাইলে তিনি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ব্যস্ত আছি বলে ফোন কেটে দেন।