বৃহস্পতিবার , ১৩ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৮শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - বসন্তকাল || ১৩ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

গায়রে মাহরামের সঙ্গে পুরুষের আচরণ কেমন হবে?

প্রকাশিত হয়েছে- বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫

ইসলামের বিধি-বিধানগুলো আল্লাহ তায়ালা প্রাপ্ত বয়স্ক নারী পুরুষের জন্য ফরজ করেছেন। ইসলামের বিধি-বিধান পালনের জন্য প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার জন্য পরকালে জবাবদিহিতা করতে হবে প্রাপ্ত বয়স্কদের। শিশুদের বিধি-বিধান পালনের জন্য জবাবদিহিতা করতে হবে না।

প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষের জন্য যেসব বিধান ফরজ করা হয়েছে তার অন্যতম হলো দৃষ্টির হেফাজত ও মাহরাম, গাইরে মাহরামের সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একে অপরের সঙ্গে পর্দা করা।
একজন নারী ও পুরুষের জন্য মাহরাম বলা হয়, নিকটাত্মীয় ১৪ জন ব্যক্তি যাদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করার জায়েজ। এর বাইরে অন্যদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করা জায়েজ নেই।

একজন পুরুষের জন্য ১৪ জন মাহরাম নারী হলেন— ১. মা ২. ফুফু (বাবার বোন) ৩. খালা (মায়ের বোন) ৪. শাশুড়ি ( স্ত্রী এর মা ) ৫. দুধ-মা (যে মা ছোট বেলায় দুধ খাইয়ে ছিলেন) ৬. নিজের বোন ৭. নানি (মায়ের মা) ৮. দাদি (বাবার মা) ৯. নাতনি (আপন ছেলে ও মেয়ের কন্যা) ১০. দুধ-বোন ১১. মেয়ে ১২. ভাতিজি (আপন ভাই-এর মেয়ে) ১৩. ভাগ্নি (আপন বোনের মেয়ে) ১৪. ছেলের বউ।
একজন নারীর জন্য ১৪ জন মাহরাম পুরুষ হলেন,— ১. বাবা ২. চাচা ৩. মামা ৪. শ্বশুর ৫. সহোদর ভাই ৬. নিজ দাদা ৭. নিজ নানা ৮. নিজ নাতি ৯. দুধ-ভাই ১০. ছেলে ১১. ভাইয়ের ছেলে ১২. বোনের ছেলে ১৩. মেয়ের জামাই ১৪. দুধ-ছেলে।

নারী ও পুরুষের জন্য এসব ব্যক্তির সঙ্গে পর্দা করতে হবে না। এদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হতে পারবে না। এর বাইরে সবার সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।

মাহরামের বাইরে গায়রে মাহরামের সঙ্গে নারী-পুরুষের চলাফেরা ও আচার আচরণ কেমন হবে, এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—

قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ یَغُضُّوۡا مِنۡ اَبۡصَارِہِمۡ وَیَحۡفَظُوۡا فُرُوۡجَہُمۡ ؕ ذٰلِکَ اَزۡکٰی لَہُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ خَبِیۡرٌۢ بِمَا یَصۡنَعُوۡنَ ٣۰ وَقُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنٰتِ یَغۡضُضۡنَ مِنۡ اَبۡصَارِہِنَّ وَیَحۡفَظۡنَ فُرُوۡجَہُنَّ وَلَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَہُنَّ اِلَّا مَا ظَہَرَ مِنۡہَا وَلۡیَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِہِنَّ عَلٰی جُیُوۡبِہِنَّ ۪

মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে; এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।
আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে; আর তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তবে যা সাধারণত প্ৰকাশ হয়ে থাকে। আর তারা তাদের গলা ও বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে। (সূরা নূর, আয়াত : ৩০-৩১)

এই আয়াতে নারী পুরুষের পরস্পরের সঙ্গে আচরণ কেমন হবে সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। সবাইকে নিজের লজ্জাস্থান হেফাজতের কথা বলা হয়েছে এবং একইসঙ্গে দৃষ্টি সংযত রাখার কথা বলা হয়েছে। দৃষ্টি সংযত রাখলে নারী-পুরুষের সঙ্গে অনাকাঙ্খিত কোনো ঘটনা এবং অন্যের প্রতি অসম্মানের ঘটনা এড়ানো সম্ভব।

কোরআন ও হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী মাহরাম নয় এমন নারী-পুরুষদের জন্য একাকী পরস্পরের কাছাকাছি যাওয়া উচিত নয়। গায়রে মাহরাম দুজন একাকী থাকলে তাদের মধ্যে তৃতীয়জন হিসেবে শয়তান আগমন করে বলে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যাদের স্বামী উপস্থিত নেই, সেসব নারীর কাছে তোমরা যেয়ো না। কেননা তোমাদের সবার মধ্যেই শয়তান (প্রবাহিত) রক্তের শিরায় বিচরণ করে।

আমরা বললাম, আপনার মধ্যেও কি? তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমার মধ্যেও। কিন্তু আমাকে আল্লাহ তায়ালা সাহায্য করেছেন, তাই আমি নিরাপদ।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১১৭২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন কখনো কোনো নারীর সঙ্গে নির্জনে সাক্ষাৎ না করে, যতক্ষণ না ওই মেয়ের কোনো মাহরাম তার সঙ্গে থাকে। কারণ সে সময় তৃতীয় জন থাকে শয়তান। (তিরমিজি, হাদিস : ২১৬৫)

গায়রে মাহরাম নারীর প্রতি সম্মান বজায় রাখতে দৃষ্টি হেফাজত করা জরুরি। কারণ, দৃষ্টি সংযত রেখে নারীর সঙ্গে চলাফেরা করলে তার প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি হবে না। কারণ< কুদৃষ্টি থেকেই মনের ভেতরে ভিন্ন ধারণা তৈরি হয় এবং সমাজের অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলো সৃষ্টি হয়। এ ধরণের ঘটনা এড়াতে রাসূল সা. বলেন—
মহান আল্লাহ অভিশম্পাত দেন কুদৃষ্টি দানকারী পুরুষ ও দৃষ্টিদানে সুযোগদানকারী নারীর ওপরও। (মিশকাত, হাদিস : ২৭০)

রাস্তা-ঘাটে হাট-বাজারে অনেক সময় অনাকাঙ্খিতভাবে পরনারী সামনে চলে আসে। ফলে হঠাৎ তার প্রতি অনাকাঙ্খিত দৃষ্টি পড়ে যায়। এমন দৃষ্টিকে রাসূল সা. ক্ষমাযোগ্য বলে ঘোষণা করেছেন। এ পরিস্থিতি সম্পর্কে হজরত আলী রা. রাসূল সা.-কে জিজ্ঞেস করলে উত্তরে রাসূল সা. বলেন-
হে আলী, অনাকাঙ্খিত দৃষ্টি পড়ে গেলে পুনরায় তুমি দৃষ্টি দিও না। কেননা প্রথম দৃষ্টি তোমর জন্য ক্ষমাযোগ্য কিন্ত পুনরায় দৃষ্টিপাত করা তোমার জন্য ক্ষমাযোগ্য নয়। (তিরমিজি, হাদিস : ২৭৭৭)