ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা এবং এলাকাবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাম্পাসে অবস্থিত ইবি থানা স্থানান্তর না করার দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। বিগত সরকারের সময় ইবি থানা ক্যাম্পাস থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে ঝাউদিয়াতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। আন্দোলনকারীরা বিগত সরকারের থানা স্থানান্তরের এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটক সংলগ্ন খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কে তারা মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন শেষে আন্দোলনকারীরা খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক অবরোধ করেন। কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক- পুলিশ সুপার আন্দোলনস্থলে এসে থানা স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত বাতিলের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত মহাসড়ক না ছাড়ার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। পরে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়ে দুপুর আড়াইটার দিলে আন্দোলন স্থগিত করেন আন্দোলনকারীরা।
এ সময় আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, স্থানীয় বিএনপি, জামায়াত ও অঙ্গসংগঠন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসী অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় আন্দোলনকারীরা জানান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং পার্শ্ববর্তী সাতটি ইউনিয়নের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও এলাকার মানুষের মতামত উপেক্ষা করে ফ্যাসিস্ট সরকারের স্বার্থান্বেষী কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তি অসত্য তথ্য দিয়ে এই থানাকে সরিয়ে ১৬ কিলোমিটার দূরে দুর্গম ঝাউদিয়ায় নেওয়ার অপচেষ্টা করেছে।
২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর নিকার কমিটির সভায় ঝাউদিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা স্থানান্তর এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসীর সম্মতিতে থানা স্থানান্তর করে এখানে পুলিশ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতামত না নিয়ে এমন অপচেষ্টা সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও ক্যাম্পাসকে সুরক্ষিত রাখতে হলে ইবি থানাকে তার পূর্বাবস্থায় বহাল রাখার কোনো বিকল্প নেই। ইবি থানা ইবিতেই থাকবে, অন্য কোথাও এই থানা স্থানান্তর করা যাবে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকার ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ইবি থানা স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসীর কোনো মতামত নেয়নি। সকলের মতামত উপেক্ষা করেই ফ্যাসিস্ট সরকারের এমন সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা ইবি থানা অন্য কোথাও স্থানান্তরের ষড়যন্ত্র মেনে নেব না। আমরা প্রয়োজনে আরও কঠোর আন্দোলন ঘোষণা করব।
ইবি থানা ও উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি সভাপতি অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হাসান লাবু বলেন, শহীদ জিয়ার গড়া আমাদের গৌরবময় ইসলামী বিশ্ববিদালয়কে অস্থিতিশীল করতেই এখানে প্রতিষ্ঠিত দীর্ঘদিনের পুলিশি থানা সরিয়ে ফেলার কার্যক্রম সম্পন্ন করেছিল পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট সরকার। সরকার পতনের এক দিন আগে গত ৪ আগস্ট মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্যের আলোকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সন্নিকটে দেখিয়ে ১৬ কিলোমিটার দূরের ঝাউদিয়াতে এ থানা স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও এলাকার মানুষের সম্মতি আছে বলেও অবৈধ সরকারের হাতে গোনা কিছু দোসর নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে মন্ত্রণালয়কে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দেয়।