বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজ চলাকালে অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যমের তিরের নিশানায় ছিলেন ভারতীয় তারকা বিরাট কোহলি। যেখানে তাকে ‘জোকার’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। এবার তেমন কিছু নয়, তবে কোহলিকে কেন্দ্র করেই ক্রিকেটবিশ্বকে বোকা বানিয়েছে দেশটির ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বিগ ব্যাশের দল সিডনি সিক্সার্স। তারা ভারতীয় এই তারকাকে দলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। পরেই অবশ্য জানিয়ে দেয় এটি ছিল মূলত ‘এপ্রিল ফুল।’
আজ (মঙ্গলবার) থেকে শুরু হয়েছে এপ্রিল মাস। যার শুরুর দিনটা নিয়ে করুণ এক ইতিহাস প্রচলিত আছে। পহেলা এপ্রিল পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। এদিন চমকে দিয়ে ‘বোকা বানাতে’ চায় একে অপরকে। এই দিনটির ইতিহাস নিয়েও অনেক মতভেদ রয়েছে। কারও মতে স্প্যানিশ মুসলিমদের ওপর চালানো হত্যাকাণ্ড ‘এপ্রিল ফুলে’র সঙ্গে জড়িত। আবার, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, ব্রিটানিকা, হিস্ট্রিসহ বেশকিছু ওয়েবসাইট বলছে ‘বোকা’ বানানোর এই রীতির উৎপত্তি হয় ফ্রান্সে। যখন ১৫০০ শতকে ক্যালেন্ডারের বদল ঘটে।
এদিকে, সিডনি সিক্সার্স বিগ ব্যাশ লিগের ইতিহাসে দ্বিতীয় সফলতম দল। তারা এখন পর্যন্ত ৩ বার বিবিএল শিরোপা জিতেছে। কেবল এই টুর্নামেন্টই নয়, আইপিএলের বাইরে অন্য কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার অনুমতি নেই ভারতীয় ক্রিকেটারদের। ফলে বিগ ব্যাশের দল সিডনির সঙ্গে কোহলির দুই বছরের চুক্তির খবরে অনেকেই চমকে উঠেছিল। সেই ভুল অবশ্য ভেঙে দিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। আরেকটি টুইটে ‘এপ্রিল ফুল’ লিখে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, নিছক মজার ছলেই আগের পোস্টটি দেওয়া হয়েছিল।
‘এপ্রিল ফুল’ নিয়ে সবচেয়ে প্রচলিত ইতিহাস
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— অনেকেই মনে করেন, ১৫ শতকের শেষদিকে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটান রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা। তারা স্পেনের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রানাডায় হামলা করেন এবং পরাজিত অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে মসজিদে আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারেন। আর সেদিনটি ছিল পহেলা এপ্রিল।
তবে এর কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই বলে ওই প্রতিবেদনে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, ‘এটি আমরাও শুনেছি এবং যা একরকম আমাদের বিশ্বাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে যখন স্পেনের ইতিহাস পড়েছি, দেখেছি যে সেসময় গ্রানাডার শাসক ছিলেন দ্বাদশ মোহাম্মদ। তার কাছ থেকেই ফার্দিনান্দ ও ইসাবেলা গ্রানাডা দখল করে নেন। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে। কোনো কোনো সূত্র বলে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ। এবং এটি দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, সেই সময় ফার্দিনান্দ ও ইসাবেলা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন করেছে, ইহুদিদের ওপরও করেছে, কিন্তু এপ্রিল ফুলের যে ট্র্যাজেডির কথা বলা হয় সেটার সঙ্গে এর কোন সত্যতা পাওয়া যায় না। ইতিহাসে আমরা যে বইগুলো পড়েছি সেখানে কোথাও ওই বর্ণনা পাইনি। আমাদের কাছে মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে একটা মিথ তৈরি করা হয়েছে, যার সঙ্গে কোনো ঐতিহাসিক সংযোগ নেই। গুরুত্ব দিয়ে অবশ্য মুসলমানরা এটি উদযাপন নাও করতে পারে। কারণ ইসলাম ধর্ম মিথ্যা বলা, প্রতারিত করা বা কাউকে বোকা বানানো সমর্থন করে না।