1. numanashulianews@gmail.com : kazi sarmin islam : kazi sarmin islam
  2. islamkazisarmin@gmail.com : newstv : Md newstv
  3. admin@newstvbangla.com : newstvbangla : Md Didar
কোরবানি ঈদে স্বজন-প্রতিবেশীর হক আদায় করবেন যেভাবে - NEWSTVBANGLA
শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৯:৪৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম
ঢাকায় রাতে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে জুলাই বিপ্লব নতুনভাবে দেশ গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে দেশের ইতিহাস লেখা যাবে না : চসিক মেয়র ‘হঠাৎ বিকট শব্দ, দৌড়ে গিয়ে দেখি বাড়ির ভেতরে আগুন আর কান্নাকাটি’ পরিবেশ দূষণমুক্ত চাইলে দূষণকারী শিল্পকারখানা বন্ধ করার আহ্বান না ফেরার দেশে নয়া দিগন্তের সাবেক সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন মাহিন সরকারের বিরুদ্ধে ৭.৫ কোটি টাকার ভুয়া গল্প, আসলেই কি ঘটেছে বেলকুচিতে রাতের মধ্যে যেসব এলাকায় ঝড় হতে পারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা হত্যা মামায় জাবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ললিপপ জনি কেরানীগঞ্জে এসি বিস্ফোরণ, একই পরিবারের ৪ জন হাসপাতালে

কোরবানি ঈদে স্বজন-প্রতিবেশীর হক আদায় করবেন যেভাবে

প্রতিনিধি

পবিত্র ঈদুল আজহা একটি আত্মত্যাগের মহোৎসব, এক হৃদয় উজাড় করে দেওয়ার ইবাদত, যার গায়ে লেগে আছে হজরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের নিষ্কলুষ আনুগত্যের সুবাস। এ ঈদ শুধু পশু কোরবানির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর অন্তর্নিহিত বার্তা হলো আত্মত্যাগ, সহমর্মিতা ও হক আদায়ের শিক্ষা। বিশেষত স্বজন ও প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্বশীলতার মনোভাব এই ঈদের অন্যতম শিক্ষা।

কোরআনের নির্দেশনা

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই খাদ্য দান করে মিসকীন, এতীম ও বন্দীদের। (সূরা দাহর, আয়াত-৮)

এই আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, আত্মত্যাগ ও কোরবানি শুধু পশু জবাইয়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর প্রকৃত রূপ প্রতিফলিত হয় দীনদার মানুষের হৃদয়ে, যারা নিজের প্রয়োজনেও ব্যবহৃত খাদ্য প্রিয়জন ও অসহায়ের মাঝে বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত।

হাদীসের আলোকে দিকনির্দেশনা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে পেট ভরে রাতে ঘুমায় অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে এবং সে তা জানে। (সহিহ বুখারি)

এই হাদিসের ভাষা অত্যন্ত তীব্র। এটি কেবল একটি নৈতিক উপদেশ নয়, বরং ঈমানের দাবির ওপর এক কঠোর পরীক্ষাস্বরূপ উচ্চারণ। কোরবানির দিনে যখন আমরা আহ্লাদে আত্মহারা হই, তখন যদি আমাদের আশপাশের কেউ অভুক্ত থাকে, তবে এ আনন্দ নিছক এক আত্মকেন্দ্রিক উল্লাস ছাড়া কিছু নয়।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

খুলাফায়ে রাশেদীন যুগে কোরবানির গোশত কেটে প্রতিবেশীদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার ঐতিহ্য ছিল। হজরত আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কোরবানির পর নিজের অংশের গোশত আগে প্রতিবেশী মিসকীনদের মাঝে বণ্টন করতেন, তারপর পরিবার নিয়ে খেতেন।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনু ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) একবার কোরবানি করার পর তার খাদেমকে আদেশ দিলেন: আমার কোরবানির গোশত এমন কোনো বাড়ি বাদ দিও না, যেখানে অভাব লেগে আছে। তরকারির ঝোল বাড়িয়ে দাও

প্রতিবেশীকে শরীক করা

এক প্রতিবেশী আরেক প্রতিবেশীকে হাদিয়া দেওয়ার বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ যে, সামান্য জিনিস হাদিয়া দিতেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন।
এক হাদিসে আছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু যর রা.- কে বলেন, হে আবু যর, তুমি ঝোল (তরকারি) রান্না করলে তার ঝোল বাড়িয়ে দিও এবং তোমার প্রতিবেশীকে তাতে শরিক করো। (সহীহ মুসলিম,হাদিস : ২৬২৫)

অন্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদেরকে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করে বলেছেন, হে মুসলিম নারীগণ! তোমাদের কেউ যেন প্রতিবেশীকে হাদিয়া দিতে সংকোচবোধ না করে। যদিও তা বকরীর খুরের মত একটি নগন্য বস্ত্তও হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০১৭)

স্বজনের হক আদায়ের উপায়

কোরবানির দিনে আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর নেওয়া শুধু সৌজন্য নয়, বরং এটি একটি ইবাদতের অংশ। অনেক সময় এমন আত্মীয় থাকে যারা অভাবের কারণে কোরবানি দিতে পারে না। যদি সামর্থ্য থাকে, তবে তাদের জন্য একটি অংশ নির্ধারণ করে দেওয়া, এমনকি পুরো একটি পশু কোরবানি করে উপহার দেওয়া এগুলো মহৎ কাজ।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আত্মীয়-স্বজনের হক দাও, মিসকীনের হক দাও এবং মুসাফিরেরও। (সূরা রূম, আয়াত : ৩৮)

এই আয়াত একে একে হকের অধিকারীদের তালিকা দিয়েছে প্রথমেই রয়েছে আত্মীয়।

প্রতিবেশীর খোঁজ খবর রাখা ঈমানের দাবি

হজরত ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ওই ব্যক্তি মুমিন নয় যে পেটপুরে খায় অথচ তার পাশের প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে। (মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ২৬৯৯; আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ১১২)

এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, অনেক প্রতিবেশীই এমন আছে, যাদের দেখে বোঝার উপায় নেই যে, তারা অভাবে দিন কাটাচ্ছে। আবার আমার কাছে কখনো চাইবেও না। কোরআন মাজীদে এদেরকে ‘মাহরূম’ বলা হয়েছে, সূরা যারিয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,(অর্থ) এবং তাদের সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও মাহরূমের (বঞ্চিতের) হক। (সূরা যারিয়াত : ১৯)

এক্ষেত্রে আমাদের কর্তব্য, নিজে থেকে তাদের খোঁজ খবর রাখা এবং দেওয়ার ক্ষেত্রে এমন পন্থা অবলম্বন করা, যাতে সে লজ্জা না পায়। এজন্যইতো যাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রে এটা বলে দেয়া জরুরি নয় যে, আমি তোমাকে যাকাত দিচ্ছি; বরং ব্যক্তি যাকাতের যোগ্য কি না এটুকু জেনে নেয়াই যথেষ্ট।

আর আমি প্রতিবেশীর প্রয়োজন পুরা করব তাহলে আল্লাহ আমার প্রয়োজন মিটিয়ে দিবেন এবং আমার সহায় হবেন। হাদীস শরীফে এসেছে, যে তার ভাইয়ের প্রয়োজন পুরা করে আল্লাহ তার প্রয়োজন পুরা করেন। (সহিহ বুখারি,হাদিস ২৪৪২; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৮০)

প্রতিবেশীর হক আদায়ের পদ্ধতি

১. গোশত ভাগ করে দেওয়া: কোরবানির গোশতের তিন ভাগ করা মুস্তাহাব এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়দের জন্য, আরেক ভাগ দরিদ্র প্রতিবেশীদের জন্য। যদিও সব দান করে দেওয়াও বৈধ ও সওয়াবের কাজ।

২. নিজ হাতে পৌঁছে দেওয়া: আত্মিক সম্পর্ক গড়তে ও আন্তরিকতা প্রকাশে নিজের হাতে গোশত পৌঁছে দেওয়া উত্তম। এটি শুধু দান নয়, বরং ভালোবাসা প্রকাশের একটি আমলিক রূপ।

৩. কথা ও আচরণে সদাচরণ: শুধু গোশত দিলেই প্রতিবেশীর হক আদায় হয় না, বরং হৃদয় গলিয়ে দেওয়া আচরণ, সম্মান ও দোয়ার বিনিময়ই এই হককে পূর্ণতা দেয়।

অবহেলার ফল

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:সে আমাদের দলভুক্ত নয়, যে ছোটদের প্রতি দয়া করে না, বড়দের সম্মান করে না, আলেমদের হক চিনে না এবং প্রতিবেশীর মর্যাদা রক্ষা করে না। (সহিহ মুসলিম)

কোরবানির ঈদ আমাদের জন্য এক মহা সুযোগ—নিজেকে গড়ার, হৃদয় জাগানোর এবং মানবতার সৌন্দর্য ছড়িয়ে দেওয়ার। এ ঈদ কেবল পশু কোরবানির উৎসব নয়, বরং মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা অহংকার, হিংসা, স্বার্থপরতা ও অবহেলাকে কোরবানি দেওয়ার দিন। আসুন, এ পবিত্র দিনে আমরা আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের হক যথাযথভাবে আদায় করি। যেন আমাদের ঈদের আনন্দ শুধু আমাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং ছড়িয়ে পড়ে সবার মাঝে হোক এ ঈদ ত্যাগের, হোক এ ঈদ ভালোবাসার।

লেখক: শিক্ষক, মারকাযুস সুন্নাহ মাদরাসা মাতুয়াইল, ডেমরা, ঢাকা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2015
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তাহোস্ট