চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব এলাকায় গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের কর্মসূচিতে এক নারীকে লাথি মেরে আলোচনায় আসা সিবগাতুল্লাহ ওরফে আকাশ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রোববার (১ জুন) বিকেলে নগরের কোতোয়ালি থানার লালদিঘী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল করিম।
তিনি জানান, বিকেল পৌনে ৩টার দিকে তাকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার এক ঘণ্টা ১৫ মিনিট পর বিকেল ৪টার দিকে আকাশ চৌধুরী তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, শুনলাম প্রশাসন আমাকে খুঁজছে। আমি চোরও না ডাকাতও না, আমাকে প্রশাসন থেকে কেন খুঁজতে হবে। আমি আমার পরিবার এবং ঘনিষ্ঠজনদের সিদ্ধান্তক্রমে আজকেই চট্টগ্রাম কোতোয়ালী থানায় আত্মসমর্পণ করার ঘোষণা দিচ্ছি।
আকাশ চৌধুরীর আত্মসমর্পণের স্ট্যাটাসের বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ওসি মো. আবদুল করিম বলেন, সেটি তার নিজস্ব বিষয়। আমাদের বক্তব্য, আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি।
গ্রেপ্তার হওয়ার সোয়া এক ঘণ্টা পর আকাশ চৌধুরীর আত্মসমর্পণের ঘোষণা দিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ওসি মো. আবদুল করিম বলেন, সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।
এদিকে, আকাশ চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের গণমাধ্যম শাখা থেকে একটি খুদে বার্তা পাঠানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, গত ২৮ মে তারিখে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে আকাশ চৌধুরী নামের একজন ব্যক্তি বাম ছাত্রজোটের এক নারীকে লাথি মেরে ঘটনাস্থলে নাজুক ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ইমাম হোসেন সঙ্গীয় ফোর্সসহ বিভিন্ন ফুটেজ সংগ্রহ করে আসামিকে শনাক্ত করেন। এরপর ১ জুন তারিখে কোতোয়ালি থানার লালদিঘী মাঠ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে কোতোয়ালি থানায় দ্রুত বিচার আইনে দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
চট্টগ্রামে মানববন্ধনে হামলা, নারীকে লাথি মারার ছবি ভাইরাল
ঘটনার প্রেক্ষাপট ও পূর্বের ঘটনা
এর আগে শুক্রবার (৩০ মে) চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত আকাশ চৌধুরীকে বহিষ্কার করে। মহানগর জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহর সই করা এক বিবৃতিতে তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে জানানো হয়। এরপর শনিবার (৩১ মে) নিজের ফেসবুক আইডি থেকে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়ে প্রেস ক্লাব এলাকার ঘটনার ব্যাখ্যা দেন আকাশ চৌধুরী।
জানা যায়, গত বুধবার (২৮ মে) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব এলাকায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির প্রতিবাদ এবং রাজশাহীতে ছাত্রজোটের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট একটি মানববন্ধন ডেকেছিল। মানববন্ধনে শাহবাগবিরোধী ঐক্য হামলা চালায়। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন। এদিন একজন নারীকে লাথি মারতে দেখা যায় আকাশ চৌধুরীকে। পরবর্তী সময়ে সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
আকাশ চৌধুরী চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার পৌরসভা এলাকার জামায়াত নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর নেছার আহদের ছেলে। তিনি একসময় ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা ছিলেন। বর্তমানে তিনি জামায়াতের কর্মী বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
এর আগেও আকাশ চৌধুরীর বিরুদ্ধে নগরের মুরাদপুরে সুন্নিদের কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগ ছিল।