রংপুরের তারাগঞ্জে ঘুরতে গিয়ে এক ইরানি দম্পতি হামলা ও ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। সোমবার (২ জুন) দুপুরে তারাগঞ্জে উপজেলার ঘনিরামপুর রামপুরা জোতপাড়া এলাকায় ছিনতাইয়ের এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার চার আসামিকে মঙ্গলবার দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ম (পুলিশ ফাইল) আদালতে নেওয়া হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে চারজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক কৃষ্ণ কমল রায়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—ঘনিরামপুর রামপুরা জোতপাড়ার রশিদুল ইসলাম (৪২), তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৩৫), মেরাজুল ইসলাম (৩৮) ও রাবেয়া বেগম (৪৫)।
তারাগঞ্জ আমলি আদালতের জিআরও সহকারী উপপুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) আল মামুন জানান, আগামীকাল বুধবার আসামিদের জামিন শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
এদিকে তারাগঞ্জ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) হাসিনুর রহমান সোমবার দিবাগত রাতে বাদী হয়ে এ ঘটনায় একটি মামলা করেন। মামলায় চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ইরানি নাগরিক সেলিম রেজা হোসাইনি (৬১) ও তার স্ত্রী ইয়াসিমিন ইয়াজ ডানজু (৫৬) গত ১৯ মে বাংলাদেশে ভ্রমণে আসেন। তারা ১ জুন ঢাকা থেকে প্রাইভেটকার ভাড়া করে নিজেরা চালিয়ে রংপুরে আসেন এবং স্থানীয় একটি অভিজাত হোটেল ওঠেন। ঘটনার দিন (২ জুন) সকালে গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে নিজেরাই গাড়ি চালিয়ে রংপুর শহর থেকে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু পথ ভুল করে তারাগঞ্জের ঘনিরামপুর এলাকায় পৌঁছান এই ইরানি দম্পতি।
সেখানে রশিদুল ইসলামের বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে পানি চেয়ে সাহায্য চান। পানি পান করার পর ইংরেজি ও ইরানি ভাষায় কথা বললে রশিদুল, তার স্ত্রী ও ভাই ইরানি নাগরিকদের প্রতারক সন্দেহে চিৎকার শুরু করেন। একপর্যায়ে আশপাশের লোকজন এনে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় ইরানি দম্পতির কাছ থেকে পাঁচটি ১০০ ডলারের নোট, একটি হাতঘড়ি, একটি মোবাইল ফোন ও তাদের পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর তারাগঞ্জ ক্যাম্প কমান্ডার মেজর সানিয়াত চৌধুরী সৃজনের নেতৃত্বে একটি টহল দল, তারাগঞ্জ থানা পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ইরানি দম্পতিকে উদ্ধার করেন। এরপর অভিযুক্ত চারজনকে সেনাবাহিনী আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।
তারাগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক বলেন, ইরানি দম্পতির ওপর হামলা ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত চারজনকে আদালতের মাধ্যমে বিকেলে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ছিনতাই হওয়া মালপত্রের মধ্যে পাসপোর্ট, একটি ঘড়ি ও একটি ১০০ ডলারের নোট উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি টাকাসহ মোবাইল ফোন উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকটে এ.বি এম রুবেল চৌধুরী বলেন, জামিন আবেদনের প্রেক্ষিতে আগামীকাল বুধবার জামিন শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছে আদালত। আসামিরা সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ হওয়ায় তারা ওই বিদেশি নাগরিকদের চিনতে বা বুঝতে পারেননি। বরং ভয় ও প্রতারণার ভীতি থেকে এমন ঘটনা ঘটেছে।