অ্যাপেনডিক্সের ব্যথা নিয়ে এখন আর কেউ তেমন মাথা ঘামান না। কারণ, উন্নত অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি এসে গেছে। এর সার্জারি সহজে ও কম সময়েই হয়ে যায়। তবে অ্যাপেনডিক্সে ক্যানসার নিয়ে কিন্তু যথেষ্টই উদ্বেগের কারণ রয়েছে।
বর্তমানে স্তন, প্রস্টেট, কোলন বা ফুসফুসের ক্যানসার নিয়ে সচেতনতার প্রচার যতটা হচ্ছে, অ্যাপেনডিক্সের ক্যানসার নিয়ে ততটা প্রচার নেই। অথচ এই রোগটিই এখন বেড়ে চলেছে কমবয়সীদের মধ্যে।
আমেরিকার ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের গবেষকেরা জানিয়েছেন, কমবয়সীদের মধ্যে অ্যাপেনডিক্স ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ছে। এর অন্যতম বড় কারণ হলো খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের পদ্ধতি। পাশাপাশি পরিবেশ থেকেও দূষিত পদার্থ ঢুকছে শরীরে, যা মারণ রোগের কারণ হয়ে উঠছে।
অ্যাপেনডিক্সে ক্যানসার কীভাবে হচ্ছে তা জানতে গেলে আগে অ্যাপেনডিক্স ও অ্যাপেন্ডিসাইটিস নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন।
অ্যাপেনডিক্স আর অ্যাপেন্ডিসাইটিস কী?
খাদ্যনালিতে ক্ষুদ্রান্ত্র আর বৃহদন্ত্রের সন্ধিস্থলে ছোট থলির মতো একটি জিনিস থাকে, যাকে বলে অ্যাপেনডিক্স। শরীরের ডান দিকে তলপেটের কাছে থাকে সেটি। এই থলির মধ্যে অজস্র ভালো ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা পরিপাকে সাহায্য করে। ‘গাট ব্যাক্টেরিয়া’ কথাটি এখন প্রায়ই শোনা যায়। এই সব ব্যাকটেরিয়ার বাসস্থানই হলো অ্যাপেনডিক্স। ব্যাকটেরয়েড, ল্যাক্টোব্যাসিলাসের মতো উপকারী ব্যাকটেরিয়ারা থাকে সেখানে। যদিও অ্যাপেনডিক্স শরীরের লুপ্তপ্রায় অঙ্গ, সেটি না থাকলেও তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। তবে থাকলে উপকারী ব্যাকটেরিয়ারা সেখানে আশ্রয় নেয় ও শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
খাবার খাওয়ার সময়ে শরীরে যে সব টক্সিন বা দূষিত পদার্থ ঢোকে, সেগুলো ওই ভালো ব্যাকটেরিয়ার ওপর প্রভাব খাটায়। খুব বেশি প্রক্রিয়াজাত খাবার, নরম পানীয়, অতিরিক্ত ক্যাফিন যুক্ত খাবার খেলে খারাপ ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ে। তখন অ্যাপেনডিক্সে সংক্রমণ ঘটে, সে জায়গাটা ফুলে ওঠে। পেটের ডান দিকে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একেই বলে অ্যাপেন্ডিসাইটিস। সাধারণত ১০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে অ্যাপেন্ডিসাইটিস বেশি দেখা যায়।
কখন হয় ক্যানসার?
প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেতে শুরু করলে, অতিরিক্ত ধূমপান করলে অ্যাপেনডিক্সের কোষের অনিয়মিত বিভাজন শুরু হয়ে ক্যানসার কোষের জন্ম হয়। ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস্ট্রিসাইটিস বা পার্নিসিয়াস অ্যানিমিয়া যাদের আছে, তাদের ঝুঁকি বেশি। কয়েক রকম ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও ক্যানসার হতে পারে। আবার পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে অথবা বংশগত ভাবে কারও ‘মাল্টিপল এন্ডোক্রিন নিয়োপ্লাসিয়া টাইপ ১’ (এমইএন১) সিনড্রোম থাকলে তার অ্যাপেনডিক্স ক্যানসার হতে পারে।
অ্যাপেনডিক্সে ক্যানসার ছড়াতে থাকলে ওজন হঠাৎ করেই কমতে থাকবে, তলপেটে মারাত্মক যন্ত্রণা শুরু হবে, সব সময়েই পেট ভর্তি মনে হবে। সেই সঙ্গে কখনো ডায়েরিয়া, আবার কখনো কোষ্ঠকাঠিন্যের উপসর্গ দেখা দেবে।