সোমবার , ২৫শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১০ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল || ২রা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

অবারিত ক্ষমার দশক

প্রকাশিত হয়েছে- বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫

মুমিন হৃদয়ের তাড়নার মাস রমজান। বছরজুড়ে মুমিনের তৃষ্ণার্ত হৃদয় এ মাসের প্রতীক্ষায় স্বপ্ন বুনে। দীর্ঘ এগারো মাসের অপ্রাপ্তিগুলো রমজানে কাটিয়ে তোলে। পুণ্যের ফল্গুধারায় নিজেকে ভাসিয়ে নিতে শুরুর দশকে শুদ্ধতার জায়নামাজে বসে মুহাম্মাদি উম্মত— তাসবিহদানার মিছিলে স্বর তোলে। অতঃপর রহমতের বৃষ্টিস্নাত মুমিনগণ মাগফিরাতের দশকে ক্ষমাপ্রাপ্তির পেয়ালা খুঁজে। ভিখারীর বেশে হাত পাতে কাবার মালিকের দরবারে।

সুরে সুরে আপন ছন্দে তাঁকে ডাকে। অশ্রুর মিছিলে নুয়ে পড়ে তাঁর কুদরতি পায়ে। গোলামের এমন মিনতি মন কাড়ে রাব্বুল আলামিনের। সাড়া দেন তার ডাকে। ক্ষমা ঘোষণায় দেন জান্নাত দানের প্রতিশ্রুতি—মাগফিরাতের দশক নিয়ে এমনসব পুণ্যগাঁথার বার্তাই দিয়েছেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি গুনাহ মাফের আশায় ইস্তেগফার করাকে নিজের ওপর আবশ্যক করে নেয়, আল্লাহ তায়ালা তাকে তিনটি পুরস্কার দেবেন— তার জীবনের কঠিন অবস্থা থেকে তাকে উদ্ধার করবেন, দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন এবং অচিন্তনীয় ও অকল্পনীয় স্থান থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’

হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবীজি (সা.) শাবান মাসের শেষ তারিখের এক বক্তৃতায় আমাদের বললেন, হে মানুষেরা, তোমাদের প্রতি ছায়া বিস্তার করেছে হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ একটি মাস। যে ব্যক্তি এ মাসে প্রভুর সামীপ্য লাভের আশায় একটি নফল কাজ করল, সে ওই ব্যক্তির সমান হবে যে অন্য মাসের একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ কাজ করল, সে ওই ব্যক্তির সমান হলো যে অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করল।

রমজান সবরের মাস, যার প্রতিদান জান্নাত। এটা ভাতৃপ্রেম ও সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস। এ মাসে মুমিনের রিজিক বৃদ্ধি করা হয়। যে ব্যক্তি রমজানে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সেটা দোজখের আগুন হতে তার মুক্তির কারণ হবে। আর যে ব্যক্তি এ মাসে নিজ দাসদাসীর প্রতি দয়া প্রদর্শনস্বরূপ কার্যভার কমাবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে দেবেন (মেশকাত)।
এটা এমন মাস যার প্রথম ১০ দিন রহমত, মধ্যম ১০ দিন মাগফিরাত আর শেষ ১০ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস।

পবিত্র কোরআনের সুরা ত্বহায় মাওলায়ে কারিম ইরশাদ করেন, ‘আর অবশ্যই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল যে তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে— এরপর সৎ পথে চলতে থাকে।’

সুরাতুল বাক্বারায় বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীকে ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও ভালোবাসেন।’
সুরাতুল নাসরে রব্বুল আলামিন বলেন, ‘তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি তওবা কবুলকারী।’

তবে এই মাগফিরাত ও ক্ষমা পেতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই পরিশুদ্ধ-পরিচ্ছন্ন মনে তাওবা করতে হবে। কারণ, তাওবা হলো পাপাচার ছেড়ে নিজেকে শুধরে নেওয়ার দৃপ্ত শপথ। খাঁটি তাওবা না করে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রাপ্তির আশা করা বোকামি।