স্থূলতা একটি ক্রমবর্ধমান বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সংকট, যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করছে এবং ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। তবে ভালো খবর হলো যে স্থূলতা মূলত প্রতিরোধযোগ্য। সচেতন জীবনযাপন এবং স্বাস্থ্য-সচেতন অভ্যাসকে অগ্রাধিকার দিলে স্থূলতা এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত জটিলতার ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যেতে পারে। জেনে নিন স্থুলতা প্রতিরোধের উপায়-
১. সুষম খাদ্য
স্থূলতা এড়াতে সুষম খাদ্য অপরিহার্য। সেজন্য হোল ফুডকে অগ্রাধিকার দিন। যেমন ফল, শাকসবজি, চর্বিহীন প্রোটিন, হোল দানাশস্য এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি নিয়মিত খেতে হবে। এছাড়া কমাতেবা বাদ দিতে হবে প্রক্রিয়াজাত খাবার। যেমন চিনিযুক্ত পানীয়, ফাস্ট ফুড এবং উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত খাবারের ব্যবহার সীমিত করুন। কোনো খাবারই অতিরিক্ত খাবেন না, বরং যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু খান। সেইসঙ্গে পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
২. শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন
নিয়মিত ব্যায়াম ওজনকে স্বাস্থ্যকর পরিসরে রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি ধরণের কার্যকলাপ, যেমন দ্রুত হাঁটা বা সাইকেল চালানোর অভ্যাস করুন। পেশী শক্তিশালীকরণ কার্যকলাপ বিপাক বৃদ্ধি করতে এবং চর্বি জমা এড়াতে সাহায্য করে। এ ধরনের ব্যায়াম বেছে নিতে পারেন। এছাড়া লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার, রিকশা বা যানবাহনের বাদলে হাঁটা অথবা বিনোদনমূলক খেলাধুলাও আপনাকে শারীরিকভাবে সক্রিয় রাখতে কাজ করবে।
৩. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস এবং মানসিক অসুস্থতা খাওয়া এবং অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ধ্যান, যোগব্যায়াম, বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম নিয়মিত করুন। এছাড়া পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি। ভালো ঘুম আপনার ক্ষুধা এবং বিপাক ভারসাম্য বজায় রাখতে কাজ করে। প্রতি রাতে সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস করুন। এছাড়া সমস্যা বেশি মনে হলে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
৪. শিশুদের মধ্যে ভালো অভ্যাস তৈরি করুন
জীবনের প্রথম দিকে স্থূলতা প্রতিরোধ করা উচিত। বাবা-মা এবং অভিভাবকেরা শিশুকে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। সারাক্ষণ ঘরে বন্দি না রেখে বাইরে খেলাধুলার অভ্যাস করুন। শিশুর হাতে স্মার্টফোন বা ট্যাব না দেওয়ার চেষ্টা করুন। দিলেও স্ক্রিনটাইম সীমিত রাখুন। নিজেদের ভেতরেও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ধরে রাখুন যা দেখে শিশু শিখতে পারবে।
৫. অভ্যাস পর্যবেক্ষণ করুন এবং পরিবর্তন করুন
স্থূলতা প্রতিরোধ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। অভ্যাসের ক্রমাগত পরীক্ষা এবং পরিবর্তন ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। ট্র্যাকে থাকার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য এবং কার্যকলাপ সংক্রান্ত সবকিছু লিখে রাখুন। হুট করে এক সপ্তাহ কিংবা এক মাসেই ওজন কমে যাবে এমন চিন্তা না করে বাস্তবসম্মত চিন্তা করুন। অল্প অল্প করেই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এছাড়া সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পুষ্টি এবং সুস্থতা সম্পর্কে ভালো করে জানুন।