ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ডাকা কর্মবিরতিতে অচল হয়ে পড়েছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ। নানান বয়সী কয়েক হাজার রোগী হাসপাতালে এসে ফিরে গেছেন চিকিৎসা না পেয়ে। বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে হাসপাতাল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
টিকেট কাউন্টারের সামনে কথা হয় বৃদ্ধা আমেনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, কোমর ও মেরুদণ্ডের প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে এসেছিলাম। সকাল ৮টার দিকে এসেছি। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোনো ডাক্তার পাইনি। টিকেট কাউন্টার বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাজিব বলেন, আড়াই বছরের মেয়েকে নিয়ে এসেছিলাম। ওর চোখ ফুলে গেছে। এসে দেখি বহির্বিভাগ বন্ধ। চিকিৎসা বন্ধ করে রেখেছে। স্বাধীন দেশে মানুষের মৌলিক অধিকার বন্ধ করে দিয়ে কোনো আন্দোলন হতে পারে না। ডাক্তাররা মানবিক হতে পারছে না। তারা অন্য ফরম্যাটেও আন্দোলন করতে পারতো।
কামাল হোসেন নামে আরেকজন বলেন, ডাক্তারদের দাবির সঙ্গে আমরাও একমত। বরিশালের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনেক অনিয়ম হচ্ছে। শিক্ষক নেই, রোগের টেস্ট হয় না। এখন দেখছি ডাক্তার রোগীদের ভোগান্তিতে ফেলে তাদের আন্দোলন করছে। এটা অমানবিক।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন বলেন, আমরা জানি ইন্টার্নরা পাঁচ দফা দাবিতে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে। কিন্তু চিকিৎসকরা কোনো কর্মবিরতিতে গেছেন বলে জানা নেই। সকালে বহির্বিভাগে রোগীরা চিকিৎসা নিয়েছেন। পরে শুনেছি চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়েছে। এজন্য তাদেরকে আমি ডেকেছিলাম। বহির্বিভাগের দায়িত্বরতা আমাকে জানাতে পারেনি তারা আন্দোলনে আছেন কিনা অর্থাৎ তারা নিজেরাও জানেন না কর্মবিরতিতে কিনা।
উল্লেখ্য, পাঁচ দফা দাবি আদায়ে সারা দেশের মেডিকেল শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতির ডাক দেন। তাদের দাবিসমূহ হচ্ছে, ডাক্তার পদবি ব্যবহারসংক্রান্ত রিট প্রত্যাহার মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করা। উন্নত বিশ্বের মান অনুযায়ী ওটিসি ড্রাগ আপডেট করা। রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসিতে ওষুধ ক্রয়-বিক্রয় আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে ঘোষণা। স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসক সংকট নিরসনে দ্রুত শূন্যপদে ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ এবং আলাদা স্বাস্থ্য কমিশন গঠনপূর্বক ৬ষ্ঠ গ্রেডে চাকরি প্রবেশপথ তৈরি। প্রতিবছর চার থেকে পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ করে চাহিদার ভারসাম্য বজায় রাখা। চিকিৎসকদের বিসিএসের বয়সসীমা ৩৪-এ উন্নীত করা। বেকার তৈরির কারখানা সব ম্যাটস প্রতিষ্ঠান এবং মানহীন মেডিকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা। শিক্ষাধীন ম্যাটস শিক্ষার্থী এবং ডিএমএফদের প্যারামেডিক হিসেবে পদায়নের ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া এসএসিএমও পদবি বাতিল করে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদবি ব্যবহার চালু হয়। এটি ডাক্তার শব্দের সমার্থক হিসেবে জনগণকে ধাঁধায় ফেলে দেয় এবং চিকিৎসকদের কর্মস্থলের নিরাপত্তায় চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও দ্রুত বাস্তবায়ন করা।