আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিক উজ্জ্বল হত্যার রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ৩

আব্দুল্লাহ আল নোমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট (ঢাকা): সাভারের আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিক রাকিবুল ইসলাম উজ্জ্বল হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে র্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১) এর একটি দল। বাহিনীটি বলছে, এই হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাবের ভাষ্যমতে, হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী জুয়েল রানা। গত ১ জুলাই মো. জুয়েল রানা ভুক্তভোগী রাকিবুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বলকে ঢাকার আশুলিয়া থানাধীন ভাদাইল মধ্যপাড়া এলাকায় ফোনের মাধ্যমে ডেকে নিয়ে আসে। জুয়েল রানা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভুক্তভোগী উজ্জ্বলকে নিয়ে ঘটনাস্থল আশুলিয়ার মধ্যপাড়ার শিকদারের বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গায় পৌঁছলে হামলার শিকার হয়। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান নেওয়া কিছু লোক উজ্জ্বলকে লোহার রড, কাঠের লাঠি, কাঠের বাটাম দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। এই হামলায় অংশ নেয় মো. জুয়েল রানা, আহম্মেদ রবি ওরফে রবিউল এবং মো. রাজু মিয়া আর পলাতক আসামি সুমন, মিল্লাদ, ইটলসহ আরো অজ্ঞাতনামা দুই-তিনজন।
র্যাবের ভাষ্য, একপর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী জুয়েল রানা উজ্জ্বলের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চাকু দিয়ে আঘাত করতে থাকে। এতে উজ্জ্বল গুরুতর আহত হলে অভিযুক্তরা উজ্জ্বলকে অচেতন অবস্থায় ওই জায়গায় রেখে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর অভিযুক্তরা বিভিন্ন জেলায় আত্মগোপনে অবস্থান করতে থাকে।
ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় চাঞ্চল্যকর রড দিয়ে পেটানো পোশাক শ্রমিক রাকিবুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল হত্যার রহস্য উদঘাটন এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মূল পরিকল্পনাকারী মো. জুয়েল রানাসহ তিনজনকে গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১। গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- মো. জুয়েল রানা, আহম্মেদ রবি ওরফে রবিউল এবং মো. রাজু মিয়া। গ্রেপ্তার মো. জুয়েল রানা বগুড়া জেলার সদর থানার মৃত আবদুস সামাদের ছেলে, আহম্মেদ রবি ওরফে রবিউল এবং মো. রাজু মিয়া একই জেলার গোলাম রাব্বানী প্রামাণিকের ছেলে। এসময় তাদের কাছ থেকে দুইটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায়, ভুক্তভোগী রাকিবুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার আশুলিয়া থানার ভাদাইল এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। তিনি নতুন ইপিজেডে ‘প্যাকজার বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করে আসছিল। চলতি বছরের ১ জুলাই সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে ভুক্তভোগী রাকিবুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বলকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আশুলিয়া থানার ভাদাইল মধ্যপাড়া এলাকায় ডেকে নিয়ে যায় জুয়েল রানা। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মো. জুয়েল রানা, আহম্মেদ রবি ওরফে রবিউল এবং মো. রাজু মিয়াসহ আরও অজ্ঞাত দুই থেকে তিনজন মিলে উজ্জ্বলকে লোহার রড ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। পরে ওই জায়গায় উজ্জ্বলকে রেখে পালিয়ে যায়।
র্যাব জানায়, উজ্জ্বলের পরিবার খবর পেয়ে ওই জায়গায় উপস্থিত হয়ে উজ্জ্বলকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক তার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে উজ্জ্বলকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তার ভাই। কিন্তু সেখানে আইসিইউ না থাকায় ভুক্তভোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় গত ৩ জুলাই উজ্জ্বলের ভাই মো. সুজন মাহমুদ বাদি হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
র্যাব আরও জানায়, গত ৪ জুলাই সকাল ১০ টার দিকে রাকিবুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। এই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে । র্যাব এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন এবং হত্যাকারীকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে ছায়া তদন্ত শুরু করে।
র্যাবের ওই সূত্রটি জানায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে র্যাব-১ এর একটি দল গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে এই হত্যার সঙ্গে জড়িত মো. জুয়েল রানা , আহম্মেদ রবি ওরফে রবিউল এবং মো. রাজু মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুইটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পোশাক শ্রমিক রাকিবুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বলকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
এ ব্যপারে র্যাব-১ এর সহকারী পরিচালক (অপস্ অফিসার) নোমান আহমদ বলেন, ঘটনার পর অভিযুক্তরা বিভিন্ন জেলায় আত্মগোপনে অবস্থান করতে থাকে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।