রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি হত্যা মামলা থেকে এক আওয়ামী লীগ নেত্রীর নাম বাদ দেওয়ার জন্য পুলিশের নামে ১০ লাখ টাকা চাঁদাদাবির মামলায় অমিত বণিক নামে এক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে এ ঘটনার থানায় বাদীকে মারপিট এবং গুলি করার চেষ্টার অভিযোগে সাধারণ ডায়ের (জিডি) করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) সকালে ব্যবসায়ী অমিত বণিককে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ও রংপুর মহানগর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক ছিলেন।
রংপুর মহানগর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি হত্যাচেষ্টা মামলার (নং-১২, তারিখ ২৩-১১-২০২৪) আসামি আওয়ামী লীগ নেত্রী লিপি ভরসা। অন্যদিকে ব্যবসায়ী অমিত বণিক নিজেকে পুলিশের সাথে সখ্যতা রয়েছে উল্লেখ করে লিপি খান ভরসাকে ওই মামলা থেকে সুরক্ষা ও নাম বাদ দেওয়ার কথা বলে ১০ লাখ টাকা থেকে চাঁদা দাবি করেন। এই সংক্রান্ত একটি কল রেকর্ড ভাইরাল হয়। এরই প্রেক্ষিতে অমিত বণিকের নামে লিপি ভরসার ম্যানেজার পলাশ হাসান বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) একটি চাঁদাবাজির মামলা করেন। সেই মামলায় বৃহস্পতিবার বিকেলে অমিত বণিককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এদিকে এ ঘটনা নিয়ে কোতোয়ালি থানায় বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে লংকাকাণ্ড ঘটেছে। পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বাদীকে মারধর এবং কনেস্টবলের রাইফেল কেড়ে নিয়ে গুলি করার চেষ্টা এবং একজন পরিদর্শক পদবির কর্মকর্তার ওপর হাত তোলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণভাবে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের হেডকোর্য়াটার্সে প্রতিবেদনও জমা পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ ঘটনায় পুরো থানাজুড়ে পুলিশের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এর আগে রংপুরে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের মিছিল থেকে জাহাজ কোম্পানি মোড়ে হামলায় গুরুতর আহত রংপুরের জিয়া মঞ্চের নেতা লুসার আহমেদ ব্যবসায়ী অমিত বণিককে আসামি করে মামলা করলে ওই কর্মকর্তা নিজে থানায় উপস্থিত হয়ে তার নাম কেটে দেন। এ সময় একজন বিএনপি নেতা নাম কাটার বিরোধিতা করলে উল্টো ওই নেতাকেই মামলা দিয়ে জেলে ঢুকানোর জন্য ওসিকেও নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাঙ্গামাটির সার্কেল এসপি থাকাকালীন সেই সময়কার পুলিশ সুপারকে থাপ্পড় মারার অভিযোগে বিভাগীয় প্রসেডিং হয়েছিল। এছাড়াও একজন ডিআইজির সাথেও অপেশাদার আচরণের কারণে প্রসেডিং হয়েছিল। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সু-সম্পর্কের জেরে ওই দুটি প্রসেডিং উৎরাতেও সক্ষম হন তিনি এবং বিষয়টি জোড় গলায় বলে বেড়ান।
তদন্ত সূত্রগুলো আরও জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যেসব মামলা হয়েছিল বিএনপি-জামায়াত এবং শিক্ষার্থীদের নামে। ৫ আগস্টের পর সেই মামলাগুলো পুলিশ হেডকোরয়ার্টার্স থেকে ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিলেও ওই কর্মকর্তা তা না দিয়ে কালক্ষেপণ করেন। সেই সময়কার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বার বার তাকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে বললেও তিনি তাদের সাথে অপেশাদার আচরণ করেন। এসব বিষয়গুলোও তদন্ত করা হচ্ছে বলে পুলিশের হেডকোয়ার্টার্সের সূত্র জানিয়েছে।
এ ব্যপারে রংপুর মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ, অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. হাবিবুর রহমান জানান, থানায় বাদীকে মারধর, গুলির চেষ্টার বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। বিষয়টি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে যে নির্দেশনা আসবে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার এক আদেশে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) মোহাম্মদ শিবলী কায়সারকে প্রত্যাহার করে উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) পদে বদলি করা হয়েছে।
রংপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. মজিদ আলী জানান, লিপি খান ভরসা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা চেষ্টা মামলার আসামি। সেই আসামিকে মামলা থেকে বাদ দেওয়া এবং তাকে সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলে পুলিশের নামে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন ব্যবসায়ী অমিত বণিক। এ বিষয়ে অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতেই অমিত বণিকের নামে চাঁদাবাজির মামলা হওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, অমিত বণিকের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে অর্থ জোগান দেওয়া এবং আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার অভিযোগও আছে। এছাড়াও মানি লন্ডারিং ও অবৈধ অর্থ লেনদেনেরও অভিযোগ আছে। এ বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সাথে লিপি খান ভরসা অবৈধ সুবিধা নেওয়ার জন্য যোগসাজস করেছে। সেকারণেও তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।